করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জেলায় জেলায় লকডাউনের কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে মানুষের চলাচল ব্যাহত হলেও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে যে যার গন্তব্যে ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর প্রবেশপথ গাবতলী, টঙ্গী-আবদুল্লাপুর, সাইনবোর্ড এলাকায় প্রশাসনের কড়াকড়ির পরও পায়ে হেঁটে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেছেন। সমন্বয়হীনতার কারণে মানুষের চলাচলই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শুধু যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কারণে রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ কয়েক গুণ বাড়তি খরচ করে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছেছেন। এদিকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় দেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাট ডাউনের’ সুপারিশ করেছে করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নারায়ণগঞ্জ : লকডাউনের তৃতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ ও বহির্গমন ঠেকাতে প্রায় সাড়ে ৬০০ গণপরিবহনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন যানসহ লকডাউন অমান্যকারীদের জেল জরিমানা ও রেস্টুরেন্ট সিলগালা করা হয়েছে। বুধবার থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ২০টি মোবাইল কোর্ট ও পুলিশ প্রশাসনের প্রায় ৩০টি টিম গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কাজ করছে। ২৫টি মামলা ও প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আইন ভঙ্গ করায় পাঁচজনকে সাত দিনের জেল ও শহরের দুটি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করা হয়েছে।
গাজীপুর : গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস বন্ধ থাকলেও সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনে লোকজনের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। দোকানপাট খোলা রাখা হচ্ছে অনেক স্থানে। শিল্প-কলকারখানা, ব্যাংক-বীমাসহ নানা ধরনের কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। চলাচলের সময়ে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলায় গতকাল ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে সাত দিনের কঠোর লকডাইন। লকডাউনের প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে দূরপাল্লার ও জেলার মধ্যে গণপরিবহন, নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। লকডাউনে গণপরিবহন না পেয়ে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। জেলা ও উপজেলা সদরে অধিকাংশ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠার বন্ধ রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে চলমান বিধিনিষেধ অমান্য করায় একজনের পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ৯টি মামলায় ৭ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মুনিম লিংকন গতকাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ আদালত পরিচালনা করেন।
দিনাজপুর : দিনাজপুর সদর উপজেলায় দ্বিতীয় দফার লকডাউন কার্যকর করতে কাজ করছে জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাস্ক ও জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছে। চলাচল সীমিত করতে শহরের বিভিন্ন সড়কে বাঁশ বেঁধে দিয়ে গতিরোধ করা হয়েছে।
পিরোজপুর : পিরোজপুরে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আগামীকাল থেকে পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া ও স্বরুপকাঠি পৌর এলাকায় লকডাউন দিতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লকডাউন চলাকালে জনগণের চলাচল সীমিত রাখতে জরুরি সেবা বাদে সব সেবা বন্ধ থাকবে।
নাটোর : নাটোরের সিংড়া ও নাটোর পৌরসভায় তৃতীয় দফাসহ জেলার আটটি পৌরসভায় বুধবার থেকে লকডাউন চলছে। লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। কাজের সন্ধানে তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন। স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না তাদের অনেকেই।
খুলনা : করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুলনা মহানগর ও জেলায় গতকাল তৃতীয় দিনের লকডাউনে সকাল থেকে নগরীতে পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। চিকিৎসকরা বলছেন, বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার ও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
ময়মনসিংহ : করোনার বিস্তার রোধে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ১১ এলাকায় চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকের স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে নগরীর মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড, চরপাড়া, নয়াপাড়া, কৃষ্টপুর, আলিয়া মাদরাসা এলাকা, নওমহল, আর কে মিশন রোড, বাউন্ডারি রোড, পাটগুদাম, কাঁচিঝুলি ও গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়েছে।
মাদারীপুর : মাদারীপুরসহ ৭ জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সাধারণ মানুষ মানছে না এই লকডাউন। অধিকাংশ এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাটবাজারে মানুষজনের সমাগম দেখা গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, মাদারীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ৫৫.৫৩ শতাংশ।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে তৃতীয় দিনের মতো কঠোর লকডাউন চলছে। কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও গ্রাম পর্যায়ে কেউ মানছেন না বিধিনিষেধ।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে সাত দিনের লকডাউনের তৃতীয় দিনেও ঢাকা- আরিচা মহাসড়কে কোনো যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করেনি। তবে পণ্যবাহী ট্রাকসহ হালকা যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কেও কোনো ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন করতে দেখা যাযনি। এ সড়কেও পুলিশ লকডাউন বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে।
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        