শিরোনাম
বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশেষ লেখা : বড় শিল্প পরিবারগুলোর কাছে আবেদন

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান

ইমদাদুল হক মিলন

গত বছর যখন করোনা শুরু হলো বাংলাদেশে, তখন প্রথমেই মানুষ খুব দিশাহারা হয়েছিল। ভয় ও আতঙ্কের পাশাপাশি কর্মহীন অসহায় মানুষ খাদ্যের অনিশ্চয়তায় পড়েছিল। তখন পর্যন্ত করোনার সঠিক চিকিৎসা ও অন্য ব্যবস্থাপনাগুলো আমাদের জানা ছিল না। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি শব্দ আমাদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। ধীরে ধীরে সে অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারলাম। করোনা একসময় অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে এলো। তারপর দেশ পড়ল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে। এবারের পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ। যদিও টিকা এসে গেছে। করোনার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মানুষ সচেতন। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ, তাঁরা পড়েছেন বড় রকমের বিপাকে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক-এ রকম মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাঁদের কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই। রাস্তার ধারে কাজের আশায় বসে আছেন দিনমজুর, কিন্তু কাজ নেই। আয়-রোজগার নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে, সন্তানদের নিয়ে  অসহায় হয়ে পড়েছেন এই শ্রেণির মানুষ। করোনার শুরুতে সচ্ছল মানুষেরা অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে যে যতটা পেরেছেন সহায়তা দিয়েছেন অসহায়জনকে। অনেক বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন। তার পরও বহু মানুষ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। কাজ নেই, ঢাকায় থেকে খাবেন কী? যখন করোনা নিয়ন্ত্রণে এলো, তখন আবার ঢাকায় ফিরতে শুরু করল মানুষ। সরকারের নানা ধরনের প্রণোদনা ছিল। অসহায় পরিবারগুলোকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ব্যবসায়ী ও সামর্থ্যবান মানুষেরা সহায়তা দিয়েছেন। কেউ খাদ্য নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, কেউ অর্থ নিয়ে। কাজ হারানো লাখ লাখ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা সর্বতোভাবেই করা হয়েছে। আমি দেখেছি, রাস্তার ধারে বসে থাকা অসহায় মানুষকে গাড়ি থামিয়ে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছেন সচ্ছল মানুষ। বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন নানা রকমের সহযোগিতা।

বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় গুণ, বিপদে পড়া মানুষের পাশে সবাই আমরা দাঁড়াই। অতীতে যত দুর্যোগ এসেছে প্রতিটি দুর্যোগে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ঘূর্ণিঝড়কবলিত মানুষ, বন্যাকবলিত মানুষ, শীতার্ত মানুষ-সবার পাশেই দাঁড়ানোর প্রবণতা বাঙালি জাতির আছে। দুঃখের বিষয়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এবার যে লকডাউন চলছে, তাতে প্রথমদিককার মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতাটা আমাদের সামর্থ্যবান মানুষদের যেন অনেকখানি কমে গেছে। গত দেড় বছরে কর্মহীন হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছে। তাদের যেন দেখার কেউ নেই। এবার যেন মানুষগুলোর পাশে সামর্থ্যবান বা বড় ব্যবসায়ীরা সেভাবে দাঁড়াচ্ছেন না।

তবে আমি ঢালাওভাবে এই মন্তব্যটা করছি না। কোনো কোনো বড় ব্যবসায়ী পরিবার এরই মধ্যে দাঁড়িয়েছে। যেমন : বসুন্ধরা গ্র“প, আবুল খায়ের গ্র“প, আকিজ গ্র“প, প্রাণ-আরএফএল গ্র“প, এ কে খান গ্র“প, বেঙ্গল গ্র“প ও আরও কোনো কোনো গ্র“প। বসুন্ধরা গ্র“প দেশের ৬৪ জেলায় ত্রাণ বিতরণের বিশাল কাজ শুরু করেছে। প্রতিটি জেলায় ৩ হাজার অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেবে বসুন্ধরা। ত্রাণ বিতরণ কাজে বসুন্ধরারই সহ-প্রতিষ্ঠান ‘কালের কণ্ঠ শুভসংঘ’কে নিয়োজিত করা হয়েছে। ‘কালের কণ্ঠ শুভসংঘ’ দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বসুন্ধরার ত্রাণ সহায়তা পরিচালনা করছে তারা।

সরকারের একার পক্ষে করোনার এই মহাদুর্যোগকাল সামাল দেওয়া কঠিন। একা সরকার অনেক কিছুই করতে পারে না। সরকারেরও সহযোগী দরকার। সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী নিয়মিত ত্রাণ কার্য পরিচালনা করছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলো করছে কিন্তু অন্যান্য দলের ত্রাণ সহযোগিতার খবর আমরা তেমন পাচ্ছি না। আশা করি, তারাও নিশ্চয়ই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে। দেশ হচ্ছে হাতের মুঠোর মতো। পাঁচ আঙুল একত্র করেই তা শক্তিশালী করতে হয়। এই মুহূর্তে আমাদের সে রকম শক্তিশালী হওয়া খুব দরকার। সরকারের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য দেশের সব বড় ব্যবসায়ীকে সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে। সাধারণ মানুষ বাঁচানোর যুদ্ধে নামতে হবে। খাদ্য দিয়ে, চিকিৎসা দিয়ে, কাজের ব্যবস্থা করে অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য। এই লেখার মধ্য দিয়ে দেশের বড় শিল্প পরিবারগুলোকে আমি বিনীত অনুরোধ জানাই, সামর্থ্য অনুযায়ী আপনারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। একদিকে সরকারের হাত শক্তিশালী করুন, অন্যদিকে মানুষ বাঁচানোর মহান কর্মে নিয়োজিত হোন। সমবেত প্রচেষ্টার ফলে আমরা নিশ্চয়ই এই মহাদুর্যোগের কাল কাটিয়ে উঠব। পরম করুণাময় আমাদের সহায় হোন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর