বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক বজ্রপাতেই মৃত্যু ১৭ বরযাত্রীর

প্রতিদিন ডেস্ক

বজ্রপাতে গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে একসঙ্গে ১৭ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। তারা সবাই বরযাত্রী, যাচ্ছিলের বৌভাতে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সদর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল পদ্মা নদী বেষ্টিত নারায়ণপুর থেকে নৌকাযোগে বরযাত্রী নিয়ে বৌভাত অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় পাশের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা এলাকায় পদ্মা নদীতে বজ্রপাতে পাঁচ মহিলাসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন নারী, দুই শিশুসহ আরও ১৩ জন।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নৌকায় ৩০-৩৫  যাত্রী ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম ১৭ জন নিহতের কথা নিশ্চিত করেন। এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের পাতুর ছেলে আল মামুন কয়েক দিন আগে বিয়ে করে বুধবার দুপুরে শ্বশুরবাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা তেররশিয়া গ্রামে হোসেন আলীর বাড়ি বিয়ে-পরবর্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় বজ্রপাত হয়। এতে তারা হতাহত হন। নিহতের মধ্যে ১২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন সূর্যনারায়ণপুরের মৃত মোস্তফার ছেলে বরের বাবা মো. পাতু (৪৫), কালুর ছেলে আলম (৪৫), টিপুর মেয়ে বেলি (৩০), শাহলালের মেয়ে মৌসুমি (২৫), বুুলু মিয়ার ছেলে সজীব (১৭), সাদেকুলের মেয়ে টকি, ডাইলপাড়া গ্রামের রফিকুলের ছেলে বাবুল (২৮), মহারাজনগর গ্রামের মৃত কামালের মেয়ে লেচন (৪৫), একই গ্রামের তবুজলের ছেলে সাইদুর রহমান ও তার মেয়ে জমিলা এবং চরবাগডাঙ্গা গ্রামের মৃত সাত্তার আলীর ছেলে সোহবুল। অন্য ছয়জনের নাম পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ১৪ লাশ ও আটজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

এদিকে জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. খাইরুননেসা জানান, যাদের আহতবস্থায় আনা হয় তার মধ্যে দু-তিন জনের অবস্থা গুরুতর এবং বাকিরা শঙ্কামুক্ত। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক সাবের আলী জানান, ফায়ার সার্ভিস ১৪টি লাশ উদ্ধার করেছে। বাকি লাশগুলো তাদের আত্মীয়স্বজন আগেই নিয়ে গেছেন।

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহবুব আলম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ডাইলপাড়া গ্রামে যান। এ সময় জেলা প্রশাসক নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার করে টাকা প্রদানের আশ্বাস দেন।

 

হতভাগ্য পাতু : ছেলের বৌকে নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলোনা হতভাগ্য মো. পাতুর। কয়েকদিন আগে ছেলে আল মামুনকে বিয়ে করিয়েছিলেন। বড় সাধ করে গতকাল ছেলেসহ আত্মীয়স্বজন নিয়ে ছেলেবউকে আনতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সুখ যেন তারা কপালে সইল না। দুপুরে বজ্রপাতে অন্য ১৬ জনের সঙ্গে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় উভয় এলাকায়ই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের সাইদুর রহমান ও তার মেয়ে জমিলা এ বরযাত্রায় ছিলেন। তারাও বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। ওই পরিবারেও চলছে মাতম।

কিশোরগঞ্জ : নিকলী উপজেলায় বজ্রপাতে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন কারপাশা ইউনিয়নের শহরমূল আউলিয়াভিটা গ্রামের মৃত আসলাম উদ্দিনের ছেলে জলহু মিয়া (৫০) ও শহরমূল গাছগড়িয়াহাটির খেলু মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩৫)। আহত দুজন শহরমূল উত্তরহাটির কাঞ্চন মিয়ার ছেলে কামরুল (৩৫) ও মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে মোতালেব (৪৫)। গতকাল রাত ১টার দিকে শহরমূল গ্রামের পাশে বড় হাওরে ঘটনাটি ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে কয়েকজন জেলে একটি নৌকায় নিকলী ও করিমগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বড় হাওরে মাছ ধরতে যান। ১টার দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় কেউ নৌকায়, কেউ হাওরে মাছ ধরছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হয়। এতে চারজন আহত হন। অন্য জেলেরা তাদের নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জলহু মিয়া ও শফিকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর