বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বিধিনিষেধের মধ্যে রাস্তায় বেড়েছে মানুষ, যানবাহন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের ত্রয়োদশ দিনে গতকাল রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচল ছিল বেশি। গণপরিবহন না থাকলেও বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিকল্প নানা পরিবহন দেখা যায়। এর মধ্যে কেউ যান কর্মক্ষেত্রে, কেউ জীবিকার প্রয়োজনে কাজের সন্ধানে বেরিয়েছেন।

রাজধানীর কোথাও দেখা গেছে গাড়ির চাপে যানজট। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও মানবিক আচরণ করতে দেখা যায়। তারা সাধারণ মানুষকে ঘরমুখো থাকতে অনুরোধ করছে। আবার কেউ জরুরি প্রয়োজনে বের হলে তাকে সহযোগিতা করছে। যাদের মুখে মাস্ক নেই তাদের মাস্ক দিয়ে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি কেউ অযৌক্তিক কারণে ঘর  থেকে বের হলে তাকে জরিমানাও করা হচ্ছে।

এদিকে বিনা কারণে রাস্তায় বের হওয়ায় গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে ৪২৫ জনকে আটক করে। মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ১৭৯ জনকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ডিএমপি ট্রাফিক ৪০৭টি গাড়িকে ৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বাড্ডা, শাহজাদপুর, রামপুরা, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল, পুরানা পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, সিটি কলেজ মোড়, রাসেল স্কয়ার মোড়, গণভবন চেকপোস্ট, গাবতলী, মাতুয়াইল, শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ছাড়া বিকল্প সব পরিবহনই চলেছে। চেকপোস্টগুলোয় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির (মিডিয়া) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, ‘কঠোর বিধিনিষেধে পুলিশের পক্ষ থেকে মানবিক আচরণ করা হচ্ছে। তবে যারা অকারণে বের হচ্ছেন তাদের জেলসহ জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রতিটি মোড়ে পুলিশ ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনছে।’

এদিকে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধে সড়কে ব্যক্তিগত যান ও মোটরসাইকেলের চলাচল বেশি দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্ট দেখে লুকোচুরি করে বেশ কিছু অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। পাড়া-মহল্লার গলিতে হামেশেই চলাচল করেছে রিকশা ও অটোরিকশা। ফার্মগেট এলাকায় এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই প্রতিদিন বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। সড়কেও বাড়ছে গাড়ির চাপ। ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ আরও বেশি। অফিস বন্ধ থাকলেও যারা বের হয়েছেন তাদের কাছে জানতে চাইলে বলেন অফিস আছে। নানা কারণে মানুষজন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছেন। পাড়া-মহল্লায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে লুকোচুরি করেই দোকানপাট খুলেছেন অনেকে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারও গাড়ি দেখলেই দোকানের শাটার ফেলে দিচ্ছেন দোকানিরা। চলে যাওয়ার পর আবার খুলছেন।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে বিধিনিষেধ আরোপ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। ঈদুল আজহা সামনে রেখে আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। এরপর আবার ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। চলবে ১০ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।

আমাদের মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার-ঘোষিত চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেও ঢাকামুখী হচ্ছেন যাত্রীরা। গত কয়েকদিনের মতো আজও (বুধবার) ঢাকামুখী যাত্রীর ভিড় রয়েছে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে। লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভিড় ঠেলে পার হচ্ছেন ফেরিতে। এদিকে গত দুই সপ্তাহের বেশি পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসতে প্রতিটি ফেরির নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। একই সঙ্গে ফেরিগুলোয় নেওয়া হচ্ছে অর্ধেক লোড। ফলে ফেরি পারাপারে যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি ঘাটসূত্র জানান, রবিবার থেকে গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী কলকারখানা খোলার ঘোষণায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের ভিড় বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। বেশির ভাগ যাত্রী পোশাকশ্রমিক হওয়ায় তাদের ফেরিতে পরিবহন করা হচ্ছে। তবে গত তিন দিনের তুলনায় বুধবার যাত্রীর চাপ কিছুটা কমেছে। প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীর সঙ্গে সীমিতসংখ্যক যানবাহন লোড দেওয়া হচ্ছে। তবে পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সীমিত করা হয়েছে ফেরি চলাচল। এ নৌপথে ১৮টি ফেরি চালু থাকলেও তীব্র স্রোতের কারণে ছয়টি ডাম্প ফেরিসহ আটটি ফেরি ঘাটের বিভিন্ন অংশে নোঙর করে রাখা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ (বুধবার) কম। তবে একদম কম তা নয়। যাত্রীরা আসছেন। ফেরিতে পার হয়ে যাচ্ছেন। কোনো দুর্ভোগে তাদের পড়তে হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তীব্র স্রোতের কারণে আমরা এখন ১০টি চালাতে পারছি। আটটি ফেরি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে কিছু পণ্যবাহী ট্রাক আটকা থাকলেও আমরা ট্রাকগুলো পর্যায়ক্রমে পার করে দিচ্ছি। তবে ঘাটে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, কাঁচামালের গাড়িসহ জরুরি আসা গাড়িগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করে করছি।’ স্থানীয় সূত্র জানান, গতকাল সকাল থেকে বাংলাবাজার ঘাটে ছোট বড় ৪ শতাধিক গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পণ্যবাহী ট্রাক রয়েছে। ঘাটে আটকা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক কবির হোসেন বলেন, ‘ঘাটে ফেরিতে যাত্রী আর ছোট গাড়ি লোড নেয়। ট্রাক কখনো তোলে কখনো তোলে না। প্রতিটি রানিং ফেরিতে তিনটি করে ট্রাক লোড নিলে আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয় না।’ বাংলাবাজার ঘাটের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘লঞ্চ না চলায় যাত্রীদের চাপ কিছুটা বাড়তি ফেরিতে। তবে উপচে পড়া ভিড় নেই। যাত্রী ও জরুরি আসা যানবাহনগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে উঠিয়ে দিচ্ছি। তাই কিছু পণ্যবাহী ট্রাক ঘাটে আটকা পড়ছে।’

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে যাত্রীদের ভোগান্তি নেই। সেই সঙ্গে কমেছে রাস্তার ভোগান্তি। গতকাল সকালের দিকে পাটুরিয়া প্রান্তে কিছু লোকের চাপ থাকলেও দুপুরের পর খালি হয়ে যায় ঘাট এলাকা। সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীদের খুব একটা দেখা মেলেনি। যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন যানবাহনে তারা চলাচল করছেন। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের কোনো চাপ নেই। তবে দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহনের সঙ্গে ঢাকাগামী কিছু লোক আসছেন। এ নৌরুটে ফেরির কোনো সংকট নেই। প্রয়োজনীয় ফেরি দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহন পার করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর