বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শত কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা

আলী রিয়াজ

গ্রাহকদের শত কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে রিলায়েন্স সমবায় সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কয়েক হাজার গ্রাহক তাদের ফাঁদে পড়ে পথে বসেছেন। দুই দশক ধরে কার্যক্রম চালানো     প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে অর্থ হাতিয়েছে। এই অর্থ সমিতির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নিজেদের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। রাজধানীর পল্টনে থাকা অফিসের আসবাবপত্র তারা বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় গ্রাহকরা আদালতে মামলা করলেও এখন পর্যন্ত কেউ আটক হননি। অনেক সরকারি-বেসরকারি অফিসের চাকরিজীবী তাদের চাকরি শেষে পাওয়া পেনশনের এককালীন টাকা, বয়োবৃদ্ধ লোকজন তাদের জীবনের শেষ সম্বল বিক্রি করে বেঁচে থাকার স্বার্থে একটুখানি উপার্জনের আশায় এই সমিতিতে টাকা বিনিয়োগ করে এখন পথে বসেছেন। সমিতির সেক্রেটারিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতারক চক্রের সদস্যদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সমিতির সদস্য ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এই সব প্রতারক। এমনকি তাদের গঠিত পকেট কমিটির লোকজনকেও এখন কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী সদস্য ও বিনিয়োগকারীরা কর্তৃপক্ষের কাছে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। জানা গেছে, শতাধিক সদস্য নিয়ে ১৯৯৯ সালে রিলায়েন্স বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। ২০০০ সালে ৩১৯/২০০০ নম্বরে রেজিস্ট্রেশন লাভ করে এ সমিতি। রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর সমিতির কলেবর জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। এরই একপর্যায়ে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ একটি কোম্পানি গঠন করে। সেই কোম্পানি দেখিয়ে ২৪ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে এবং ৪ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে সমিতির সদস্য ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এ টাকা সংগ্রহের কাজে নেতৃত্ব দেন সমিতির তৎকালীন সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, সহসভাপতি বদিউল আলম মজুমদার ও কোষাধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন। এর সঙ্গে রয়েছেন আবদুল ওয়াজেদ কিরণ, হিরণ আহম্মেদ ও মো. ইফতেখার হোসেন নামের আরও তিন ব্যক্তি। সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান একজন সরকারি চাকরিজীবী। কোষাধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন বিসিআইসির কর্মকর্তা হওয়ার কারণে সহজেই সমিতির সদস্য ও সাধারণ জনগণের আস্থা লাভ করেন। ফলে সমিতির সদস্য ও সাধারণ মানুষ লভ্যাংশের আশায় রিলায়েন্স বহুমুখী সমবায় সমিতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রাখেন। সমিতির সদস্য ও সাধারণ মানুষের এই বিপুল পরিমাণের গচ্ছিত অর্থ পেয়ে সমিতির তিন কর্মকর্তা রাজধানীর ঝিগাতলা, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, ট্যানারি মোড়, লালমাটিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক লাক্সারি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করেন। বিনিয়োগ হিসেবে এসব ফ্ল্যাট কেনা হলেও সবগুলো ফ্ল্যাটই নিজেদের নামে ক্রয় করেন তারা। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ সদস্যরা প্রশ্ন করা শুরু করলে একাধিকবার অফিস পরিবর্তন করা হয়। বিপুলসংখ্যক আমানতকারী ও বিনিয়োগকারী তাদের জমা দেওয়া অর্থ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। অনেকেই নিজেদের বিনিয়োগ উঠিয়ে নিতে আবেদন করেন। দিনের পর দিন অফিসে ঘোরাঘুরি করে এবং বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও তারা নিজেদের গচ্ছিত অর্থ ফেরত পাননি। কয়েক বছর ধরে কোনো অফিস নেই প্রতিষ্ঠানটির। অফিস ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। সমিতির রেজিস্টার্ড অফিসের ঠিকানা : ৩৬ তোপখানা রোড, পল্টন, ঢাকা-১০০০ হলেও বর্তমানে এ সমিতির অফিস কোথায় তা কেউ জানে না। সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে এ ধরনের কোনো অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সমিতির সাধারণ সদস্য এবং শত শত বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি তথা সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। বর্তমানে সমিতির পরিচালনা কমিটির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সমিতির অফিসে পর্যন্ত তারা কেউ যাচ্ছেন না। কদাচিৎ কোথাও হঠাৎ দু-একজন কর্মকর্তার দেখা মিললেও তারা নয়ছয় কথা বলে, নানা রকমের আশ্বাস/বুঝ দিয়ে কেটে পড়েছেন। এখন আর সেই দেখাটুকুও মিলছে না। সর্বশেষ গ্রাহকরা শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা করেছেন। চলতি বছর জানুয়ারিতে করা মামলা নম্বর ১৭ ও ১৮।

সর্বশেষ খবর