বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সীতাকুন্ড উপকূলে বনদস্যু চক্র সক্রিয়

বাড়বকুন্ডে চলছে গাছ কাটার মহোৎসব, আটক গাছভর্তি ট্রাক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ড-বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে একটি বনদস্যু চক্র প্রতিদিন লাখ টাকার সরকারি গাছ কেটে পাচার করছে। সর্বশেষ সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোরে ট্রাকে ট্রাকে কাঠ পাচারকালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বসুন্ধরা গ্রুপের সিকিউরিটি গার্ডরা আটক করে বন বিভাগে খবর দেন। বন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছগুলো জব্দ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের দক্ষিণ নড়ালিয়া মৌজায় অবস্থিত উপকূলীয় বন বিভাগের বনভূমিতে হাজার হাজার আকাশমণি, কেওড়া ও গেওয়া গাছ রয়েছে। ১৯৯১-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূল রক্ষায় গাছগুলো সরকারি উদ্যোগে রোপণ করা হয়। কালক্রমে গাছগুলো এখন বিশাল মহিরুহে পরিণত। এতে গাছগুলোর ওপর কুনজর পড়েছে বনদস্যুদের। এলাকাবাসী জানান, বাড়বকুন্ড ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় একাধিক বনদস্যু চক্র সক্রিয়। চক্রগুলো কয়েক দিন ধরে মূল্যবান আকাশমণি গাছগুলো কেটে ট্রাকযোগে পাচার করছিল। কিন্তু এসব গাছ রক্ষায় বন কর্মকর্তারা কেউ এগিয়ে আসেননি। সর্বশেষ সোমবার বিকালে ও রাতে বাড়বকুন্ডের নড়ালিয়া মৌজার উপকূলীয় বন থেকে বড় বড় আকাশমণি কেটে ট্রাক বোঝাই করে চক্রের সদস্যরা মঙ্গলবার ভোরে পাচার শুরু করে। খবর পেয়ে কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা ও বসুন্ধরা গ্রুপের সিকিউরিটি গার্ডরা তাদের বাধা দেন। তারা ট্রাকসহ গাছগুলো আটক করে বন বিভাগকে খবর দিলেও প্রথমে বন বিভাগ ঘটনাস্থলে যেতে গড়িমসি করে। শেষে এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে উপকূলীয় বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে কাঠবোঝাই ট্রাকটি নিজেদের জিম্মায় নেন। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনো কাঠবোঝাই ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এলাকাবাসী। এ সময় উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার কামাল হোসেন, বাঁশবাড়িয়া বিট অফিসার আবদুস সালামসহ বনরক্ষীরা সেখানে উপস্থিত থেকে অন্য একটি ট্রাকে কাটা গাছগুলো নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এলাকাবাসী আরও জানান, গাছগুলো নড়ালিয়া মৌজায় অবস্থিত উপকূলীয় বন থেকে কেটে ট্রাকযোগে বাঁশবাড়িয়া সড়ক হয়ে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ট্রাকে ২০-২৫টি মাঝারি আকাশমণি গাছ ছিল। পরে আরও প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বেড়িবাঁধের ওপর এবং উপকূলীয় বনের চারদিকে প্রচুর কাটা গাছ ও ডালপালা ছড়িয়ে আছে। পরিদর্শনকালে ঘটনাস্থলের এক প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মো. জাফর ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে গাছগুলো কাটছে একদল বনদস্যু। মোহাম্মদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির নেতৃত্বে চারজনের একটি দল ১০-১৫ জন শ্রমিক লাগিয়ে গাছগুলো কেটে পাচার করছিলেন। সোমবার রাতভর অনেক ট্রাকে কাঠ পাচার করা হয়েছে। মো. জাফর বলেন, এখানে বিশাল উপকূলীয় বনে ১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রচুর গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। পরেও প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। তিনি নিজেও এ বনে অনেক গাছ লাগিয়েছেন। এখন বনদস্যুরা নির্মমভাবে গাছগুলো কেটে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করছে। লাখ লাখ টাকার কাঠ বিক্রি করছে বনদস্যুরা। এখানে উপকূলীয় বিট কার্যালয়ে বিট অফিসার ও বনরক্ষী আছেন। তাদের কাজ কী? তারা কেন বাধা দিতে আসেননি? তাদের খবর দেওয়া হলেও যথাসময়ে সাড়া দেননি। এখানে সুবিশাল বনের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক আকাশমণি ও অন্যান্য গাছ কাটা হয়েছে বলে জানান নড়ালিয়ার অধিবাসী শফি আলমও। তিনি গাছ কাটায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেন। বাড়বকুন্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী বলেন, ‘বাড়বকুন্ডের উপকূলীয় বন থেকে প্রচুর গাছ কেটে পাশের বাঁশবাড়িয়া সড়ক দিয়ে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় আমার এলাকার কয়েক ব্যক্তির নাম শুনে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিশ্চিত যারা গাছগুলো কেটেছে তারা আমার এলাকার নয়। তারা অন্য এলাকা থেকে এসে এসব করেছে।’ সীতাকুন্ড উপকূলীয় রেঞ্জ অফিসার কামাল হোসেন বলেন, ‘ট্রাকযোগে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গেছি। গাছগুলো জব্দ করেছি। এসব গাছ কাটার সঙ্গে বনকর্মীরা জড়িত আছেন বলে আমি মনে করি না। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে বাঁশবাড়িয়া বিট অফিসার আবদুস সালাম জড়িত, তাই আমরা বিষয়টি তদন্ত করব।’ গাছ কাটার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর