শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

জুয়েলারি খাতে বিপ্লব আনবে বসুন্ধরা গ্রুপের বিনিয়োগ

-এফবিসিসিআই সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুয়েলারি খাতে বিপ্লব আনবে বসুন্ধরা গ্রুপের বিনিয়োগ

জুয়েলারি শিল্পে অনন্য অবদানের জন্য গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আয়োজিত গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। তাঁর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান দোলন। এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল ও বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা উপস্থিত ছিলেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, জুয়েলারি খাতে বিপ্লব আনবে বসুন্ধরা গ্রুপের বিনিয়োগ। বসুন্ধরা গ্রুপ যে গোল্ড রিফাইনারি নিয়ে আসছে তাতে দেশের জুয়েলারি ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে। আমাদের বাজার অনেক বড় হবে। মানুষ কেনাকাটা বেশি করবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি হবে। জুয়েলারি শিল্পের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর এ খাতকে আরও উন্নত করবেন। তাঁর হাত ধরে বিশাল একটা পরিবর্তন আসবে জুয়েলারি খাতে। বসুন্ধরা গ্রুপ জুয়েলারি খাতে অনেক বড় বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে, এটা দরকার ছিল। বিদেশে কেনাকাটা করতে গিয়ে দেখেছি তারা কীভাবে ডিজাইনের পরিবর্তন এনেছেন, বিদেশে রপ্তানি করছেন। গতকাল রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আয়োজিত গুণীজন সংবর্ধনা-২০২১ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ, বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড ও আরিশা জুয়েলার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ভারত ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করলেও আমরা এখনো ১ শতাংশও করতে পারিনি। আমরা কেন রপ্তানি করতে পারব না? আগামীতে জুয়েলারি খাত অগ্রাধিকার শিল্প হিসেবে এগিয়ে যাবে। দেশে উৎপাদন করে রপ্তানি করলে জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন বাড়বে, এটা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। প্রায় ২ কোটি মানুষ বিদেশে আছেন। আসুন আমরা নবীন-প্রবীণ সবাই মিলে বিদেশে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করি।

তিনি বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই সোনার গহনা মানুষের কাছে মূল্যবান সম্পদ। অনেকের কাছে আভিজাত্যের অংশ। ধনী বা গরিব কমবেশি আমরা সবাই ব্যবহার করি সোনার গহনা। অনেকে ভবিষ্যতের সম্পদ হিসেবেও রাখেন সোনার গহনা। আরিশা জুয়েলার্স লিমিটেডের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোয় সোনার অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। এ শিল্পে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি হয়। হাতে তৈরি গহনার প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে প্রস্তুত হয়। কিন্তু সোনার গহনা রপ্তানিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। অথচ রপ্তানিতে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা।

বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডের এই কর্ণধার বলেন, বিশ্ববাজারে হাতে তৈরি সোনার গহনার কদর বাড়ছে। এশিয়ার অনেক দেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সোনার গহনা রপ্তানি করে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও কানাডার মতো উন্নত দেশে বাংলাদেশি গহনা রপ্তানির চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশি কারিগরদের হাতে তৈরি গহনা রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রয়োজন নতুন নতুন উদ্যোগ। পাশাপাশি সোনার গহনা রপ্তানিতে সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন।

সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার নিবন্ধিত জুয়েলারি ব্যবসায়ী আছেন। এখন জুয়েলারি শিল্প গড়ে ওঠা উচিত। যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি বা জিডিপিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। বিদেশে আমাদের পোশাকশিল্পের যেমন সুনাম, তেমনি জুয়েলারি শিল্পেও সুনাম অর্জন করতে হবে। পোশাকশিল্পের চাইতে সোনার গহনা তৈরিতে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি হয়। তিনি আরও বলেন, সারা দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হাতে হাত রেখে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটা করতে পারলে এ শিল্প বিকাশের পথে যে কোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। আগামী দিনে নবীন ও প্রবীণ মিলে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইর সহসভাপতি আমিন হেলালী, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল। স্বাগত বক্তব্য দেন বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান দোলন, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

এফবিসিসিআইর সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আদিকাল থেকেই জুয়েলারি ব্যবসা চলে আসছে। আমি মনে করি জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের কাছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অনেক বেশি প্রত্যাশা। স্বর্ণ ব্যবসার প্রসারে নতুন কমিটি এসে সব ধরনের সমস্যা দূর করবে বলে আশা করি।

বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান দোলন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বর্ণ নীতিমালা। যারা স্বর্ণ ব্যবসা সম্প্রসারণ করে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে বিগত সময় থেকে আজ পর্যন্ত অবদান রেখেছেন তাদের জন্য আমরা এ সম্মাননা প্রদানের আয়োজন করেছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ব্যবসায়ীরাও জুয়েলারি ব্যবসায় অবদানের স্বীকৃতি দেবেন বলে আমি আশা করি। তিনি বলেন, স্বর্ণালঙ্কার তৈরির ব্যয় আমাদের প্রতিবেশী দেশের তিন গুণ। স্বর্ণালঙ্কার তৈরিতে ওয়েস্টেজ কমিয়ে আনতে হবে। আমরা আশা করি, আগামী নেতৃত্ব একটি স্থায়ী ভবন ও একটি জুয়েলারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি আরও বলেন, জুয়েলারি মালিক সমিতি মহামারীর মধ্যে এক পয়সাও প্রণোদনা পায়নি।

বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ রায় বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর আগামী কমিটির দায়িত্ব নিয়ে জুয়েলারি মালিক সমিতির অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করবেন বলে আমি আশা করি। জুয়েলারি ব্যবসার উন্নয়নে আমরা একেকজন একেক কাজ করছি। আমরা আগামীতে আর স্বর্ণের বার আমদানি করব না। বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডে তৈরি মেড ইন বাংলাদেশ লেখা বার রপ্তানি করব। বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান আজাদ বলেন, আগামী কমিটি জুয়েলারি ব্যবসা সম্প্রসারণে ভ্যাট-ট্যাক্স সম্পর্কিত জটিলতাগুলো দূর করবেন বলে আশা করছি। বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে প্রথম এবং একমাত্র গোল্ড রিফাইনারি বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড করার সাহস দেখানোর জন্য গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এতে শুধু বাংলাদেশ নয় এশিয়ায় জুয়েলারি শিল্পের বিপ্লব ঘটবে। অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান দোলন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানের অতিথিরা গুণীজন সংবর্ধনা পাওয়া দেশের খ্যাতনামা জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে বাজুস গুণীজন সংবর্ধনা-২০২১-এর সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

বাজুস সম্মাননা পাওয়া তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক সংঘ, ঢাকা গোল্ড লিমিটেড ও বাংলা গোল্ড (প্রা.) লিমিটেড। আর জুয়েলারি খাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাজুস সম্মাননা পাওয়া ১১ জন হলেন- আলী আকবর খান (মরণোত্তর), এ জেড এম ছানাউল্ল্যা (মরণোত্তর), শামসুল আলম (মরণোত্তর), এম এ হান্নান আজাদ, দিলদার আহমেদ সেলিম, ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, এম এ ওয়াদুদ খান, ডা. দিলীপ কুমার রায়, কাজী সিরাজুল ইসলাম এবং গঙ্গাচরণ মালাকার।

সর্বশেষ খবর