রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আবারও এক শিক্ষার্থী ও এক সাংবাদিকের প্রাণ গেল। তারা হলেন- গ্রিন ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান লিমন (২২) ও দৈনিক সংবাদের সম্পাদনা সহকারী এমদাদ হোসেন (৬০)। গত শুক্রবার রাতে বিমানবন্দর সড়ক ও কলেজগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা দুটি ঘটে। নিহত দুজনই মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। তাদের চাপা দেয় লরি ও ট্রাক। শিক্ষার্থী লিমনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা পশ্চিম গ্রামে। আমি চট্টগ্রামে থাকি। লিমন তার মা মোসলেমা বেগমের সঙ্গে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় থাকত। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে লিমন দ্বিতীয়। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ছেলের লাশ দেখতে পান। চিকিৎসার জন্য শুক্রবার রাতে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিলেন লিমনের মা। ছেলের মৃত্যুর খবর না দিয়েই মাঝ রাস্তা থেকে তাকে বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন করা হবে।
খালিদ মাহমুদ টুটুল নামে লিমনের এক সহপাঠী জানান, তারা শেওড়াপাড়ার গ্রীন ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট থেকে তার মা ঢাকায় আসছিলেন। তখন সে ঝিগাতলায় খালার বাসায় ছিল। মাকে আনার জন্য খালার বাসা থেকে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে উত্তরা যাচ্ছিলেন লিমন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, শুক্রবার রাতে বিমানবন্দর কাউলা পদ্মওয়েল আউট গোয়িংয়ে একটি লরি পেছন থেকে লিমনকে ধাক্কা দেয়। এতে সে পিচলিয়ে পড়ে গেলে লরির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে উঠে যায়। এতে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বিমানবন্দর থানার এসআই আসাদুজ্জামান শেখ জানান, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল ওই তরুণ। তখন লরির চাপায় আহত হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই যুবকের কাছে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিচয় জানা যায়। লরিটি আটক করা হলেও চালক পালিয়ে গেছে। এদিকে, শুক্রবার রাতে মিরপুর রোডের কলেজ গেটে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে ট্রাকচাপায় এমদাদ হোসেন নামে এক গণমাধ্যমকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি দৈনিক সংবাদে সম্পাদনা সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় ট্রাকের চালক ও ট্রাকটি শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। নিহত সংবাদকর্মীর ছোট ভাই সেলিম জানান, আমার বড় ভাই দৈনিক সংবাদে কাজ করতেন। রাতে অফিস শেষ করে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে আসার পর পেছন থেকে একটি ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম হাসান নামে নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই পান্থপথ মোড়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় গণমাধ্যমকর্মী আহসান কবির খান মারা যান। এরপর ২৯ নভেম্বর রামপুরায় দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ যায় এসএসসির ফলপ্রত্যাশী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের।