দেশে কোটিপতির সংখ্যা প্রথমবারের মতো ১ লাখ ছাড়িয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে প্রায় ১৩ হাজার। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে কোটিপতি বেড়েছে ৬ হাজারের বেশি। আর করোনার মধ্যেই গত দেড় বছরে কোটিপতি বেড়েছে ১৭ হাজারের বেশি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন করোনাকালীন মানুষের আয় কমার পরও কোটিপতির সংখ্যা বাড়ার এ প্রবণতা সমাজে আয়-বৈষম্য বাড়াচ্ছে। তারা বলছেন, দেশে অর্থনীতির আকার ক্রমেই বড় হচ্ছে। প্রতি বছরই বাড়ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়। তবে কিছু মানুষ যেমন গরিব হয়েছে, তেমন ধনীরা আরও বেশি ধনী হয়েছে। তাদের মতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুণগত মান না বাড়ায় সমাজের একটি শ্রেণির কাছেই বেশি সম্পদ ও অর্থ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি অ্যাকাউন্ট ছিল ৮৭ হাজার ৪৯০টি। ফলে গত এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ১২ হাজার ৭৪৯টি। অন্যদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে দেশে কোটিপতি আমানতকারী অ্যাকাউন্ট ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। এ হিসাবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৬ হাজার ৩৪৯ জন। সেখানে গত বছরের প্রথম নয় মাসে কোটিপতি আমানতকারী অ্যাকাউন্ট বেড়েছিল মাত্র ৩ হাজার ৬৫১টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২৩৯। ফলে করোনায় গত দেড় বছরে দেশে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ১৭ হাজার ৬১৪ জন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময়ে ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৭২৫টি। ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১১ হাজার ৭৯টি। ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৩ হাজার ৬৪২টি। ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট ১ হাজার ৭৪০টি। ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট ১ হাজার ১৮৩টি। ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট ৯১৬টি। ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৩৫ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট ৪৩০টি। ৩৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট ৩২৬টি। ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট ৬২৯টি। আর ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত গচ্ছিত রাখা অ্যাকাউন্ট ১ হাজার ৫৫৯টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন পাঁচজন। ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়।