বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
এটিএম কার্ড জালিয়াতি

তুর্কি নাগরিকসহ আন্তর্জাতিক চক্রের দুজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় একটি ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ থেকে তিন দিনে ৮৪ বার টাকা তোলার চেষ্টার পর এটিএম কার্ড জালিয়াতির আন্তর্জাতিক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- তুরস্কের নাগরিক হাকান জানবুরকান ও বাংলাদেশের নাগরিক মো. মফিউল ইসলাম। এদের মধ্যে হাকান এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় দুই বছর আগে ভারতে গ্রেফতারের পর পালিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, ১৫টি ক্লোন কার্ডসহ মোট ১৭টি কার্ড জব্দ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, তুরস্কের নাগরিক হাকান আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং এবং স্ক্যামিং চক্রের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। গত ৩১ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং পল্টন এলাকায় হোটেল ‘দ্য ক্যাপিটালে’ ওঠেন। গত ২ থেকে ৪ জানুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন এটিএম বুথে গিয়ে তিনি বিভিন্ন দেশের একাধিক ক্লোন কার্ড ব্যবহার করে ৮৪ বার টাকা তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাংকটি অ্যান্টি স্ক্যামিং টেকনোলজি ব্যবহার করায় অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে বিষয়টি নজরে আসে এবং স্ক্যামিংয়ে বাধা দিতে সক্ষম হয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজল্যান্ড, ইউএসএ, ইন্ডিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বলিভিয়া, স্পেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়েসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে তিনি এ চেষ্টা চালান। সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, তুরস্কের নাগরিক হাকান ২০১৯ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের পল্টন বাজার পুলিশ স্টেশনের এটিএম বুথ স্ক্যামিং মামলায় অন্য এক তুরস্কের নাগরিক এবং দুই বাংলাদেশিসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা ভারতের বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে কার্ড ক্লোনিং করে প্রায় ১০ লাখ রুপি আত্মসাৎ করেন। গ্রেফতার হাকান ভারতে প্রায় ২০ মাস জেলে থাকার সময় আগরতলার ‘গোবিন্দ বল্লভ পন্থ’ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পালিয়ে যান। পরবর্তীতে হাকান এক ভারতীয়ের সাহায্যে ২ লাখ রুপির বিনিময়ে সিকিম হয়ে নেপালে পৌঁছান। সেখান থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে নিজ দেশ তুরস্কে ফিরে যান এবং নতুন পাসপোর্ট তৈরি করেন। এই চক্রে একাধিক বাংলাদেশিসহ তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মেক্সিকো, ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নাগরিক জড়িত আছে বলে জানা গেছে। গ্রেফতার দুজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান। সিটিটিসির ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাহফুজুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ অভিযানটি পরিচালিত হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিসি মাহফুজ বলেন, গতকাল পল্টন থানার মামলায় আসামি দুজনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। তুরস্কের নাগরিক হাকান ও মফিউলকে জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রের বিস্তারিত জানা যাবে বলে আশা করছি।

সর্বশেষ খবর