প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিতর্কমুক্ত ও নিরপেক্ষ ইমেজের ব্যক্তি খুঁজছে সার্চ কমিটি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য এখন পর্যন্ত ৩০টি নাম পাওয়া গেছে। বিতর্কমুক্ত ও নিরপেক্ষ ব্যক্তির সন্ধানে প্রধান নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য কমিশনের নাম প্রস্তাবে বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক ও পেশাজীবী সংগঠনের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেবে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি। এ ছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে তাদের পছন্দের নাম চাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার দুপুরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি পাঠানো হবে। আর শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত তালিকা জমা নেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে কমিটিকে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। সার্চ কমিটির গতকালের বৈঠকে কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘আগামীকাল (আজ) দুপুরের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হবে। প্রত্যেক দলকে অনুরোধ করা হবে শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনলাইনে অথবা শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে অনধিক ১০ জনের নাম প্রস্তাব করার জন্য। শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কার্যালয় খোলা থাকবে। সেখানে প্রস্তাব গ্রহণ করার ব্যবস্থা রাখা হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং অন্যদের কাছেও পরামর্শ চাওয়া হবে। তাদের কোনো সুপারিশ-পরামর্শ থাকলে তারাও দিতে পারবেন। সুধী সমাজ, সাংবাদিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যক্তিদের সঙ্গে আগামী শনি ও রবিবার দুই দিনে অনুসন্ধান কমিটি আরও তিনটি বৈঠক করবে বলে জানান সচিব। বুধবার দুপুরের মধ্যে তাদের কাছেও চিঠি পাঠানো হবে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘আগামী শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং পৌনে ১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত দুটি মিটিং হবে বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যক্তিদের সঙ্গে। তার পরদিন রবিবার বিকাল ৪টায় আবার মিটিং হবে। মোট তিনটি মিটিং হবে তাদের নিয়ে। তাদেরও আগামীকাল (আজ) দুপুরের মধ্যে চিঠি দিয়ে দেব। তাদের যদি কোনো সুপারিশ-প্রস্তাব থাকে তবে অনলাইনে কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে পারবেন।’ সুধী সমাজ, সাংবাদিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘৬০ জন ব্যক্তির প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। কেউ বাদ পড়লে, তাও বিবেচনায় রাখা হবে। কমিটি তাদের (বাদ পড়াদের) ডাকা দরকার মনে করলে ডাকবে। তবে নামগুলো বাছাই করা হয়ে গেছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ইসি গঠনের জন্য অন্তত ৩০ জনের নাম পেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অনুসন্ধান কমিটির মেয়াদ ১৫ কার্যদিবস। বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষের আগেই অনুসন্ধান কমিটি নাম প্রস্তাবের প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। আগামীকাল (আজ) নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। এরপর আর নির্বাচন থাকবে না। তারপরও এই আইনি দিকটা আমরা আবার নিরীক্ষা করে দেখব, কমিশনের থাকা বা না থাকার মেয়াদের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কিনা।’ অনুসন্ধান কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে এক প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। অ্যাবসুলিউটলি নিরপেক্ষ থাকবে।’ সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’-এর ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হয়। এ আইনের আলোকে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয় গত শনিবার। আইন অনুযায়ী, ইসি গঠনে নামের সুপারিশ চূড়ান্তের জন্য অনুসন্ধান কমিটির সময় ১৫ কার্যদিবস। এই কমিটি নতুন ইসি গঠনের জন্য কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবে। সেই নাম থেকে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আর সেই ইসির পরিচালনায় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হবে। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ পূর্ণ করছে।