মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলো ভাষা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলো ভাষা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা ভাষা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এর প্রতি প্রথম মনোযোগ দেয়। গতকাল বিকালে ‘মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা আমাদের ভাষা বা গবেষণার বিষয়ে তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়নি। বিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণা ছাড়া কখনো এগোনো যায় না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি লক্ষ্য করেছি, গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। লক্ষ্যই তখন ছিল না। আসলে থাকবেই বা কী করে, সেটা আপনারা ভালোই বোঝেন। আমি সে বিষয়ে আর বলতে চাই না।’ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গবেষণায় বরাদ্দ রাখে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কেবল সরকারে এসেছি। আর্থিক সংকট প্রবল। আমার মনে আছে প্রথমে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিই। পরের বছর যখন বাজেট করি, সেখানে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখি শুধু গবেষণার জন্য।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের এই দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন গঠন করে তখন প্রবাসী বাঙালি সালাম ও রফিক অন্য কতগুলো ভাষাভাষীদের নিয়ে “ভালোবাসি মাতৃভাষাকে” নামে সংগঠন করেছিল এবং এর মাধ্যমে জাতিসংঘে প্রস্তাব পেশ করেছিল একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান করলে হবে না, একটি সদস্যরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রস্তাব আসতে হবে। তখন আমরা উদ্যোগ নিই, প্রস্তাব পেশ করি এবং ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সেটা পাস হয়। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের শহীদ দিবস না, সমগ্র বিশ্বের মাতৃভাষাভাষীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। পৃথিবীর অনেক দেশ এ দিবসটি পালন করে এটা বাঙালি জাতি হিসেবে অত্যন্ত গর্বের। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলা ভাষায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন।’

১৯৯৬ সাল-পূর্ববর্তী দেশে একটাই মোবাইল কোম্পানি ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকা ছাড়া সারা দেশের মোবাইল ব্যবস্থা অ্যানালগ ছিল, ডিজিটাল ছিল না। ক্ষমতায় এসে প্রথমে মোবাইল উন্মুক্ত করেছি। তারপর দেশে যেন ডিজিটাল মোবাইল হয়, সে ব্যবস্থা নিয়েছি।’ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি অর্জনের জন্য সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের ভাষা দিবস না। সমগ্র বিশ্বের ভাষাভাষীদের মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর অনেক দেশ এ দিবসটি পালন করে। এটা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। কারণ জাতির পিতা বাংলা ভাষায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বায়ান্ন সালে রক্ত দিয়ে ভাষাশহীদরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জনের জন্য রক্তের অক্ষরে লিখে দিয়ে যান। বাঙালি জাতির জন্য রক্ত দিয়ে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করার দিন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই কিন্তু ধাপে ধাপে আমাদের স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় পেয়েছি এবং স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি।’

কোনো বিদেশি শব্দের জটিল বাংলা পরিভাষা ব্যবহারের বদলে সহজ ও বহুল প্রচলিত বিদেশি শব্দ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কনটেন্ট’ শব্দটির বাংলা পরিভাষা হলো ‘আধেয়’। এ বাংলা বললে কেউ কিন্তু বুঝবে না। কাজেই খটোমটো পরিভাষা ব্যবহার না করে মানুষ সহজেই বোঝে এমন বহুল প্রচলিত বিদেশি শব্দ ব্যবহার করা উচিত।

ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় কনটেন্ট তৈরির তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কম্পিউটার বা ইন্টারনেটে বাংলায় কনটেন্ট তৈরি করা বা বাংলা ভাষাকে আরও সহজ করে দেওয়া যায় কি না তা ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলা কি-বোর্ড এসেছে, তবে সেগুলোকে আরও সহজ করে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের যুক্তাক্ষরগুলো এত খটোমটো। এগুলোকে সহজ করার ব্যাপারে আজকেও আমি আমাদের মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছি। আমরা বাঙালি জাতি। আর এ ভাষা আন্দোলন থেকে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা সমানতালে এগিয়ে যেতে চাই।’ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক ড. লাফিফা জামান। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় সরকার এসে আমরা একটু সুযোগ পেলাম। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এখন করেছি, আমরা কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিচ্ছি, আমাদের ছেলেমেয়েরা জাতীয় শিক্ষা পায় তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, আমাদের শিক্ষকদের কনটেন্ট তৈরি করার জন্য আমরা প্রশিক্ষণও দিয়েছি। তারা নিজেরাই যেন কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর