সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
হঠাৎ অবনতি আইনশৃঙ্খলার

ছুরিকাঘাতে চিকিৎসক খুন রাজধানীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছুরিকাঘাতে চিকিৎসক খুন রাজধানীতে

আহমেদ মাহী বুলবুল

রাজধানীতে আহমেদ মাহী বুলবুল (৩৪) নামে এক চিকিৎসককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ডেন্টিস্ট ছিলেন এবং দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় নির্মাণাধীন মেট্রোরেল স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার ও স্বজনরা। এমনকি নেটিজেনরাও তার মৃত্যু মেনে নেননি। তারা ফেসবুকে ডা. বুলবুলের মানবিক কর্মকান্ড তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন। ঘটনার পর থেকেই পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের বাড়ি রংপুরে শোকের মাতম চলছে। কী কারণে বা কেন হত্যাকান্ডের শিকার হলেন ডা. বুলবুল তা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ডিসি আ স ম মাহতাব উদ্দিন জানান, ভোরে নোয়াখালী যাওয়ার জন্য শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে বের হন ডা. বুলবুল। এ সময় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বুলবুলের উরুতে ছুরিকাঘাত করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। তার শার্টের পকেটে রাখা মোবাইলটি নিয়ে গেছে। তবে প্যান্টের পকেটে রাখা আরেকটি মোবাইল নেয়নি। এমনকি তার মানিব্যাগে রাখা ১২ হাজার টাকাও নেয়নি। দুর্বৃত্তরা ছিনতাইকারী হতে পারে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। কারা তাকে ছুরিকাঘাত করেছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শাম্মী আখতার শান্তি বাদী হয়ে মিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। বিকালে ডা. বুলবুলের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার লাশ গ্রামের বাড়ি রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রংপুরের কোতোয়ালি থানার ভগিবালাপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডা. বুলবুলের ভাই বকুল। জানা গেছে, ডা. বুলবুল মগবাজারে সেঞ্চুরি আর্কেড মার্কেটে রংপুর ডেন্টাল ক্লিনিক নামে একটি চেম্বার খুলে চিকিৎসা দিতেন। সেখানে তিনি দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন। স্বজনদের দাবি, এ চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঠিকাদারি কাজ করতেন। সব শেষে নোয়াখালীতে ১৮ কোটি টাকার একটি কাজ পেয়েছিলেন ডা. বুলবুল। জানা গেছে, বুলবুলের বাড়ি রংপুর নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভগিবালাপাড়া এলাকায়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বুলবুল বড়। বাবা  আবদুস সামাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন।  চাকরিরত অবস্থায় ১৯৯৯ সালে তার বাবা মারা যান। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন বুলবুল। পরে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকাতেই প্র্যাকটিস শুরু করেন। মাঝে-মধ্যে রংপুরের বাড়িতে যেতেন। বিয়ে করেছেন দিনাজপুরে। সাত বছর বয়সী মেয়ে এবং দেড় বছর বয়সী ছেলে ও স্ত্রী শাম্মীকে নিয়ে ঢাকার শেওড়াপাড়ার ১১৮/এফ, আনন্দবাজার বাসায় থাকতেন ডা. বুলবুল। ডা. বুলবুলের মা বুলবুলি বেগম বলেন, শনিবার রাতে বিকাশে ২ হাজার টাকা পাঠিয়ে দুধ কিনে রাখতে বলেছিল বুলবুল। তার কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়িতে আসার কথা ছিল। বাড়িতে এসে সেই দুধ নিয়ে যেত। তার আগেই মৃত্যুর খবর পেলাম। তিনি সন্তান হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বুলবুলের ছোট ভাই বকুল বলেন, রবিবার (গতকাল) সকালে মোবাইল ফোনে খবর পাই ভাইকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। তিন দিন আগে আমাকে ফোন করে ভাই বলেন, তুই রেডি থাকিস রবিবার বা সোমবার নোয়াখালী যাব। আমি ভাইয়ের কথামতো ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর এলো। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তা বুঝে উঠতে পারছি না। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

নিহতের ছোট বোন লাভলী সামাদ বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বড় ভাই বুলবুল। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। ঠিকাদারি কাজে নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল। এখন ভাই নেই। দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা কীভাবে দিন পাড়ি দেবেন? রংপুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল গফফার বলেন, বুলবুল খুব ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের লোক ছিল। সকালে খবর পেয়ে বুলবুলদের বাড়ি গিয়েছি। এত ভালো মানুষকে এভাবে হত্যা করা হবে এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।

রংপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বুলবুল খুব ভালো ছাত্র এবং শান্ত স্বাভাবের ছিল। এ ধরনের হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছি না। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর