মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টি কারাগারে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

৩০৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ

আদালত প্রতিবেদক

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ আত্মসাতের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

এর আগে রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশ চার আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার আসামিকে কারা-ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক সাত কার্যদিবসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। কারাগারে পাঠানো চার আসামি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান। এর আগে আগাম জামিন চেয়ে তারা হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন। দুই দিন শুনানি করে তা সরাসরি খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বিচারিক আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বেলা পৌনে ২টার দিকে শাহবাগ থানা পুলিশ চার আসামিকে ঢাকার আদালতে হাজির করে। পরে তাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ৩টার পর এজলাসে তোলা হয় তাদের। আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহিনুর ইসলাম ও মো. বোরহানউদ্দিন বলেন, ‘আসামিরা শিক্ষা, শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে। আমরা মামলার মেরিটে যেতে চাই না। আমরা তাদের জামিন আবেদনও করিনি। তবে তারা যেন কারাগারে একটু আরামে থাকতে পারেন এ জন্য ডিভিশনের আবেদন করছি।’ এরপর দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী আসামিদের এক দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। আমরা জিজ্ঞাসাবাদের আদেশের প্রার্থনা করছি। প্রার্থনা করছি, আপনি (বিচারক) জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেবেন।’ আসামিপক্ষের আইনজীবী জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের বিরোধিতা না করলেও আদালতকে বলেন, ‘আসামিদের এখন জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হবে। তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য-উপাত্ত জেনেশুনে মামলা করেছেন। এখন আবার জিজ্ঞাসাবাদ কেন!’ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন, জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশনের আদেশ দেন এবং আদেশ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে যে কোনো এক দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীর করা এ মামলায় ট্রাস্টি বোর্ডের ওই চার সদস্য ছাড়াও চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালীকে আসামি করা হয়। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরে নিজেরা ওই এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে আসামিরা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেছেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারায়, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর