বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

পদ্মা সেতুর অংশীদার হয়ে গর্বিত অগ্রণী ব্যাংক

মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংক

আলী রিয়াজ

পদ্মা সেতুর অংশীদার হয়ে গর্বিত অগ্রণী ব্যাংক

বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতার একটি দৃঢ় প্রতীক হিসেবে চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। এই পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ নয়, সারা দেশের অর্থনীতিতে এটি বড় ভূমিকা রাখবে। নানা রকমের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে চাইলে আমরা যে কোনো কিছু করতে পারি। এই পদ্মা সেতুতে ফরেন কারেন্সি সরবরাহের একক ব্যাংক হিসেবে অগ্রণী ব্যাংক দায়িত্ব পালন করেছে। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেছেন, এই প্রকল্পে বড় অংশীদার হতে পেরে অগ্রণী ব্যাংক গর্বিত। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ব্যাংকের বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকসহ পদ্মা ব্যাংক প্রকল্পে তাদের ভূমিকার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘যখন পদ্মা সেতুর প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে তখন প্রথম সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব ড. মোশাররফ হোসেনের কাছে গিয়েছিলাম এফডিআর আনার জন্য। তখন আলোচনা হয় পদ্মা সেতু নিয়ে। পদ্মা সেতুর সফলতার পেছনে তার ভূমিকা রয়েছে। পরে যখন পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন আমরা এগিয়ে এসেছিলাম। কারণ কোথা থেকে ফরেন কারেন্সি আসবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়। অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমরা বলেছিলাম, আমরা সব ডলার সরবরাহ করব। পুরো প্রকল্পে ২.৪৩ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এখন পর্যন্ত আমরা ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছি। একক ব্যাংক হিসেবে শুরু থেকে আমরা এখন পর্যন্ত সব ফরেন কারেন্সি সরবরাহ করেছি। উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে এখন আমাদের পদ্মা সেতু। গর্বের সঙ্গে আমরা বলতে পারি, অগ্রণী ব্যাংক এই সেতু প্রকল্পের বড় অংশীদার।’ মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে আজ এই সফলতা আমরা দেখাতে পেরেছি। অর্থায়নের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সবাই কাজ করেছি। তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকেও ধন্যবাদ জানাতে হয়। আমরা যখন প্রস্তাবে রাজি হয়েছি পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমরা ফরেন কারেন্সি সরবরাহ করব, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের নীতি সহায়তা দিয়েছে। এমনকি গভর্নর অনুমোদন করেছেন, যদি অগ্রণী ব্যাংকের ডলার সরবরাহে কোনো সংকট হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাশে থাকবে ও আমাদের অর্থ দেবে। এই নীতি সহায়তার ওপর ভর করে আমরা সফল হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের পরিচালনা পর্ষদ, বিশেষ করে একজন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আমাদের সহায়তা করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। আমরা এখন পর্যন্ত যে ডলার সরবরাহ করেছি সেটিও সম্ভব হয়েছে পর্ষদের সঠিক নেতৃত্বের কারণে।’ অগ্রণী ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে আমাদের ভূমিকায় ব্যাংকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও গর্বিত। গুলশান ব্র্যাঞ্চে যে সেতু প্রকল্পের অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখান থেকেই সব লেনদেন হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমরা সব কার্যক্রম চালিয়ে যাব। এ সেতু যে দেশের মানুষকে কতখানি আনন্দ দিয়েছে, সেই আনন্দ আমরা বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছি। পদ্মা সেতুতে এত বেশি ভূমিকা ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর কারও নেই।’ শামস-উল ইসলাম বলেন, সবার অগ্রে থাকার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত ব্যাংকটির নাম রেখেছিলেন অগ্রণী। সেই লক্ষ্যে গত পাঁচ বছরের বিপুল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে অগ্রণী ব্যাংক। তাকে ‘বেস্ট ব্যাংকার’ হিসেবে ‘অষ্টম ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড-২০১৮’-তে ভূষিত করেছে ড. ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন। স্বাধীনতার পর থেকে ৪৫ বছরে ব্যাংকটিতে যা কাজ হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই এর তুলনায় বেশি কাজ হয়েছে গত পাঁচ বছরে। যে কারণে এই পাঁচ বছরে সাফল্যও ধরা দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। করোনা মহামারিসহ নানামুখী প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ব্যাংকটি তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক খাতের আইকনিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা রেমিট্যান্স আহরণ, আমানত, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, গ্রিন ব্যাংকিং, অনাদায়ী ঋণ আদায়, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে শীর্ষে রয়েছি। মধ্যমেয়াদে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দীর্ঘমেয়াদে দেশের সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ভিত গড়ে দিতে নিরবচ্ছিন্ন গতিতে কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ১৯৭২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪৫ বছরের তুলনায় ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ১০৪ শতাংশ, ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছে ১২৫ শতাংশ, বিনিয়োগ বেড়েছে ৭২ শতাংশ, মোট সম্পদ বেড়েছে ৯২ শতাংশ, গ্রামীণ ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫৮ শতাংশ, শিল্প ঋণ বেড়েছে ১০৬ শতাংশ এবং এসএমই খাতে অগ্রিম বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। পাশাপাশি লোকসানি শাখা কমেছে ৭৭ শতাংশ। শ্রেণিকৃত ঋণের হার ২৯ শতাংশ থেকে কমে ১৩ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রেই ৪৫ বছরে যা অগ্রগতি হয়েছে এর চেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে গত পাঁচ বছরে।

অগ্রণী ব্যাংকের সিইও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর যে দায়িত্বগুলো অর্পণ করেছেন সেগুলো যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে ব্যাংকে গুড গভর্নেন্স বাস্তবায়নে আমরা বেশ উন্নতি করেছি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, আমি  অগ্রণী  ব্যাংকে একটি ভালো পর্ষদ পেয়েছি, যারা প্রতিনিয়ত ব্যাংককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথোপযুক্ত দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে অনেক সমস্যাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ১৯৭২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪৫ বছরে আমানত বেড়েছে ৪৯ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরে আমানত বেড়েছে ৫১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ৪৫ বছরের তুলনায় পাঁচ বছরে আমানত বেশি সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের মে মাসে দেশের তৃতীয় ব্যাংক হিসেবে লাখ কোটি টাকার আমানতের মাইলফলক অতিক্রম করে অগ্রণী ব্যাংক। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত ১ লাখ ৯৫৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অথচ এই সময়ে আমানত ধরে রাখাই ছিল চ্যালেঞ্জ। কারণ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার বিধান করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বেসরকারি ব্যাংকে আমানতে সুদ হারও দশমিক ৫ শতাংশ বেশি বেঁধে দেওয়া হয়। এসবের সঙ্গে করোনা মহামারির কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমানত দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে পেরেছি।’ বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করার ফলেই পাঁচ বছরে এত অর্জন সম্ভব হয়েছে। কারণ কীভাবে দেশকে ভালোবাসতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে হয় সেই আদর্শ স্থাপন করে গেছেন জাতির পিতা। যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করবে তার পক্ষেই সম্ভব হবে দেশের ও দেশের মানুষকে সেবা দেওয়ার। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর