২৫ এপ্রিল, ২০২২
বর্ণবৈষম্যের এই দেশ ইংল্যান্ড। এখানে মাল্টিকালচার আছে, মানুষ মানুষকে ভালোবাসে। এমনকি সব ধরনের জীবজন্তুকেও ভালোবাসে। আমি বলি ভালোবাসা এদেশ থেকে শিখতে হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পার হয়েছে আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ চলছে বিশ্বজুড়ে। আমি লিখছি, পড়ছি, দেখছি। জীবনের একটা স্বপ্ন ছিল ব্রিটেনের বুকে যদি বঙ্গবন্ধুর একটা ভাস্কর্য করতে পারতাম তবেই বাঙালির সার্থকতা আসত।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিদেশে কেউ করতে পারেনি। আমরা অনেকেই চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি বাংলাদেশ হাইকমিশন, হাইকমিশনার সাইদুর রহমান কেমডেনে ব্রান্স উইক পার্কে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন ২০১৫ সালে, খরচ ধরেছিলেন ২ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিল অনুমতি দেয়নি। এদিকে ইস্ট লন্ডনে বসবাসকারী লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আফছার সাদেক, পিতা মরহুম এম এ খান ইঞ্জিনিয়ার, বাড়ি বিয়ানীবাজার, সিলেট, ২০০৯ সাল থেকে একাই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমোদনের জন্য। ওই টাওয়ার হ্যামলেটসে আবার বাঙালি মেয়র লুৎফর রহমান, কেউ কেউ লুৎফুরকে অন্য ঘরানার লোক বলে মনে করতেন, আমিও মনে করতাম। এটা ছিল ভুল। অবশেষে ২০১৪ সালে সাদেক খান টাওয়ার হ্যামলেটস থেকে ভাস্কর্য স্থাপনের পুরো অনুমতি পান। যা আমি দেখেও মুগ্ধ। সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয়কে অবগত করে দেখান। তারপর ভাস্কর্য বানানোর অনুমতি নিয়ে লন্ডন থেকে ইন্ডিয়া চলে যান। ভাস্কর্য শিল্পীর সঙ্গে দেখা করতে এবং জাতির পিতার ভাস্কর্য বানানোর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হস্তান্তর করে একটা জমি নিয়ে এসে আমাকে দেখান। সাদেকের এই দূরদর্শিতা দেখে আমি বলেছিলাম, ‘তুমি তো দেখি সংগ্রামী মানুষ, তুমি পারবা।’
সাদেকের একটা গুণ মানুষকে খুব ভালোবাসে আর বিশ্বাস তার পুঁজি, তাদের ভাইদের মধ্যে সে ছোট কিন্তু বিশ্বস্ত। ব্যবসার সব দায়িত্ব তার ওপর। জাতির পিতার ভাস্কর্য করতে সব খরচ সাদেক নিজে জুগিয়েছেন, এটা অসাধারণ। আমার এখন চরণ চলে না, না হয় প্রতিদিন গিয়ে জাতির পিতাকে ছুঁয়ে দেখে আসতাম।]
২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভাস্কর্য উন্মুক্ত করা হয় সর্বসাধারণের জন্য। উন্মুক্ত করেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, বাংলাদেশ হাইকমিশনার নাজমুল কাউনাইনসহ কমিউনিটির হাজারো মানুষ। এর পরপরই মুজিববিরোধীরা মামলা দিয়ে দিল আফছার খান সাদেকের ওপর। ভাস্কর্য এক মাসের মধ্যে তুলে ফেলতে হবে বলে এনফোর্সমেন্ট নোটিস জারি করে। আফছার খান সাদেক নিরুপায়, পারমিশন থাকা সত্ত্বেও এ অন্যায় কী করবেন, মুজিব ঘরানার কিছু সংখ্যক লোকও খুশি, এখন সাদেক কী করবেন? কেউ কেউ গালিগালাজও করছেন সাদেক খানকে। এমনকি এদেশের কিছু বাংলা পত্রিকা ফলাও করে নিউজ করল ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তুলে ফেলার নির্দেশ’ শিরোনামে। বেচারা নিরুপায় হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ও লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনারের সহযোগিতা চাইলেন, পেলেনও। এমনকি হাইকমিশনার নাজমুল কাউনাইন সাদেককে বলেছিলেন, প্রয়োজনে তিনি টাকা পয়সা দিয়েও সাহায্য করবেন, সাদেক খান কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা চাননি। টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জনবিগ্স বা তার প্রশাসন কোনো কথাই শুনলেন না। শেষমেশ আপিল করলেন উচ্চ আদালতে। উচ্চ আদালত রায় দিলেন। এটা ‘ল’ ফুল আইনানুগ ডেভেলপমেন্ট। এই ভাস্কর্য আইন-কানুন মেনেই হয়েছে এটা থাকবে আজীবন। কাউন্সিলের দায়েরকৃত মামলা কুয়াসমেন্ট করে দেন। রায় আসে ২০১৭ সালের জুন মাসে।
[বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ঘিরে সিসিটিভি আছে। হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে আর হিংসা মানুষকে চ্যালেঞ্জিংয়ের মোকাবিলা করতে শেখায়। সাদেক খান সেদিক থেকে একজন পরীক্ষিত পাক্কা ‘মুজিব প্রেমিক’। নিখাদ ভালোবাসা জাতির পিতার প্রতি, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার প্রতি। ইতিমধ্যে সাদেক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাণী, ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর বাণীসহ কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের লেখা দিয়ে বড় এক পাবলিকেশন প্রকাশ করেছেন-নাম ‘মেমোরিজ অব বঙ্গবন্ধু’ যা আমার দৃষ্টিতে খুবই মূল্যবান। এরকম প্রকাশনা আমি খুব কমই পেয়েছি।
ইংল্যান্ডের টুরিস্ট গাইড ব্লুবেইজ হ্যারি জ্যাকসনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কত শত দেশি-বিদেশি মানুষ এই ভাস্কর্যে এসে বাংলাদেশকে জানতে পারছে। সাদেককে একটু সহযোগিতা করা দরকার, উৎসাহ দেওয়া দরকার। সাদেকের ছয় বেড রুমের এ বাড়ি মুজিবপ্রেমীদের আড্ডাখানা। কত মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা আসেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান দেখাতে। সাদেক পরিবারের কাছে থেকে পেয়ে যান সম্মান ও আদর আপ্যায়ন। পরিদর্শন বইতে দেখলাম যারা পরিদর্শন করে গেছেন তাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য। এত মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই ভাস্কর্য পরিদর্শন করে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে গিয়েছেন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো তারা কেউই বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদে আফছার খান সাদেকের প্রবাসে এত বড় মহতী উদ্যোগের জন্য কোনো ধন্যবাদ প্রস্তাবও রাখেননি। তবে ভাববো লন্ডন ছেড়ে দেশের মাটিতে পা ফেলে প্রবাসের কথা তারা বেমালুম ভুলে যান? এ বিষয়টি আমাকে আহত করেছে। অনেক প্রভাবশালী, ধনী ব্যক্তি লন্ডনে আছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় উপস্থাপন করার মতো সাহস একমাত্র সাদেক খানই দেখিয়েছেন।
আফছার খান সাদেক মুজিব পাগল। ভাস্কর্য সংলগ্ন বাড়িটি ‘বঙ্গবন্ধু হাউস’ হবে। হয়তো করোনা মহামারির কারণে হচ্ছে না তবে অচিরেই হবে এটা আমার বিশ্বাস। আফছার খান সাদেক আমাদের ইতিহাসের অংশীদার করেছেন। আমার জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য লন্ডনে দেখতে পেলাম এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী আছে?
আর যে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু সপরিবারে প্রাণ দিলেন আর সে দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয় এর চেয়ে দুঃখের ঘটনা আর কী আছে? এ লজ্জা আমরা রাখব কোথায়? সাহস তোদের। শেখ হাসিনা কী নিরাপদ একই প্রশ্ন বারবার। আমার সময় বেশি নেই, নেত্রীর নিরাপত্তার জন্য সাদেকদের প্রয়োজন-এরা আপসহীন অদম্য সাহসী।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        