মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

আরও বড় বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন দুর্গত এলাকায় কাল সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরও বড় বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি এবং উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সন্তুষ্ট না হয়ে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের আরও বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা কেউ যাতে সন্তুষ্ট না থাকি। পানি এসে দ্রুত চলে গেছে বলে মনে করার কারণ নেই পানি আর আসবে না। আবহাওয়ার পূর্বাভাস যেমন দেখছি, তাতে একেবারে অসম্ভব কিছু না যে, পরে আবার এ রকম হতে পারে না। আসামে ম্যাসিভ বন্যা হয়েছে কিন্তু আসামের পানিটা ওইভাবে আসেনি, যেভাবে মেঘালয়ের পানিটা আসছে। কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে আসামের পানি এলে রেডি থাকতে। প্রধানমন্ত্রী সিলেট যাচ্ছেন জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সেখানে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সবাইকে বসে কর্মপরিকল্পনা করার জন্য বলা হয়েছে। আমাদের এখানে যে পানি এসেছে সেটা মেঘালয় দিয়ে এসেছে। মেঘালয় দিয়ে আসার কারণে একটা স্পেসিফিক জোনে পানিটা বেশি ছিল। আসাম ও ত্রিপুরাতেও কিছু বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু সেটার ইম্প্যাক্ট ঠিক আমাদের এখানে সেভাবে পড়েনি। এবার বন্যায় যেভাবে পানি এসেছে, তাতে আগামী ৫০-৬০ বছরের মধ্যে এভাবে পানি ঢোকেনি। যে পানিটা এসেছে, সেটা ম্যানেজ করা টাফ। পানিটা এমনভাবে এসেছে যে, কাউকে সুযোগ দেয়নি। আমাদের সৌভাগ্য যে শুরু থেকেই আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করায় বড় ধরনের দুর্যোগ আমাদের হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, বন্যার কারণে চারপাশে দেয়াল দিয়ে সুনামগঞ্জ সদরের সাড়ে ৭ হাজার টন খাদ্য থাকা খাদ্যগুদাম রক্ষা করা হয়েছে। আর একটা গুদামে বিএডিসির সার ছিল, সেটাও আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। সিলেটের বন্যায় সবচেয়ে প্রশংসার বিষয় হলো- মানুষ যে এত ধৈর্য ধরছে, এটা সবচেয়ে বড় প্রশংসার বিষয়। মানুষ কোথাও ক্ষুব্ধ হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রয়োজন হলে রাস্তাগুলো কেটে দিতে হবে, কিন্তু দেখা গেছে রাস্তার ৫-৬ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, তাই রাস্তা কাটার প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে কৃষিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এরপর যদি বন্যা হয়, ভাসমান বীজতলা এগুলো করার জন্য যাতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

আজ সিলেট সুনামগঞ্জ নেত্রকোনা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। সকালে হেলিকপ্টারযোগে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন। বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সিলেট বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করার কথা রয়েছে। পাহাড়ি ঢল, আর অতি ভারী বৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই জেলার লাখ লাখ মানুষ।

আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন, আগামীকাল সকাল ১১টায় তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৫ জুন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন এবং বন্যাকবলিত সিলেট, নেত্রকোনা এবং সুনামগঞ্জ জেলা পরিদর্শন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জনশুমারিতে দেওয়া তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হবে : জনশুমারিতে দেওয়া তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১’ উপলক্ষে নাগরিকদের কাছে পাঠানো ভয়েস মেসেজে এ নিশ্চয়তা দেন তিনি। ভয়েস মেসেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি শেখ হাসিনা। আসসালামু আলাইকুম। ১৫ জুন হতে ২১ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা হচ্ছে। শুমারির কাজে নিয়োজিত কর্মীকে সঠিক তথ্য দিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় উন্নয়নে অংশ নিন।

আপনার দেওয়া সব তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হবে। আপনি নিজে তথ্য দিন, অপরকে তথ্য দিতে উৎসাহিত করুন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে গর্বিত অংশীদার হোন। ১০ বছর পরপর দেশে আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত বছর এ শুমারি হয়নি। এক বছর পিছিয়ে ২০২২ সালের ১৫ জুন থেকে শুরু হয় এর কার্যক্রম। এবার এর নাম দেওয়া হয়েছে জনশুমারি ও গৃহগণনা। এবার পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর