রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বস্তি-অস্বস্তিতে শ্রীলঙ্কা

পৌঁছেছে ডিজেলের প্রথম চালান। আসছে পেট্রোল। সুপার মার্কেটগুলোতে ফুরিয়ে এসেছে নিত্যপণ্য। কাটেনি ওষুধ সংকট। পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট পদ শূন্য ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বস্তি-অস্বস্তিতে শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কার রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল -এএফপি

গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের পর শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভের ঢেউ অনেকটাই থেমে গেছে। উল্লাস করেছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল দেশটির পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন ডেকে প্রেসিডেন্ট পদ আনুষ্ঠানিকভাবে শূন্য  ঘোষণা করা হয়েছে। ভয়াবহ জ্বালানি সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় গতকাল পৌঁছেছে ডিজেলের চালান। পথে আছে পেট্রোলবাহী জাহাজ। এসব স্বস্তির খবরের মধ্যেও দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে রয়ে গেছে ভয়াবহ খাদ্য ও ওষুধ সংকট। কলম্বোর সুপার মার্কেটগুলোতেও ফুরিয়ে এসেছে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপণ্য। নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৫৭ লাখ মানুষের জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন প্রায় ২৩ লাখ শিশুর।

লঙ্কান গণমাধ্যম ডেইলি মিররের তথ্যানুযায়ী, গতকাল কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়। সেখানে পার্লামেন্টের সেক্রেটারি জেনারেল ধামিকা দাসানায়েক প্রেসিডেন্ট পদ শূন্যের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। দাসানায়েক বলেন, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ১৯ জুলাই তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। সকাল ১০টা থেকে  সেদিন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হবে। একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২০ জুলাই পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। তিনি স্পিকারের কাছে পাঠানো প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগপত্রটি পড়ে শোনান। পদত্যাগপত্রে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে কভিড মহামারি সমগ্র বিশ্বকে প্রভাবিত করে। তিনি সে সময়ে শ্রীলঙ্কাকে মহামারি থেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালান এবং তাতে তিনি সন্তুষ্ট। ২০২০ ও ২০২১ সালে লকডাউন কার্যকর করায় দেশ বৈদেশিক মুদ্রা হারায় এবং অর্থনীতি ধসে পড়ে, যা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। সংকট মোকাবিলায় সর্বদলীয় সরকার গঠনে সহায়তা করার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে গেলেও তিনি জন্মভূমির সেবা করে যাবেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়া, কৃষি ও পর্যটন খাতে ধস, রাজস্ব আয় আসে না এমন একের পর এক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। নেই খাবার, জ্বালানি, এমনকি প্রয়োজনীয় ওষুধ। ডিজেলের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। শ্রীলঙ্কার সংকটের চিত্র ফুটে উঠেছে লঙ্কান ক্রিকেটার চামিকা করুণারত্নের বক্তব্যে। তিনি সম্প্রতি এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি দুই দিন দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করার পর ভাগ্যক্রমে পেট্রোল পেয়েছেন। জ্বালানি সংকটের কারণে তিনি ক্রিকেট অনুশীলনেও যেতে পারেননি। দুই দিন লাইনে থেকে ১০ হাজার রুপিতে যতটুকু পেট্রোল  পেয়েছেন তা সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিন থাকবে।

এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস ধরে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সম্প্রতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হামলা হয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বর্তমানে নতুন প্রেসিডেন্টের অপেক্ষায় আছে শ্রীলঙ্কা।

এদিকে দীর্ঘদিন পর গতকাল সকালে শ্রীলঙ্কায় ডিজেলের একটি চালান এসে পৌঁছেছে। ডিজেল বহনকারী আরও একটি জাহাজ গতকাল পৌঁছানোর কথা। দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা জানিয়েছেন, ডিজেলের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই পেট্রোলের প্রথম চালান পৌঁছাবে। তিনটি চালানের জন্য আগেই অর্থ প্রদান করা হয়েছে। তবে চাইলেই হুটহাট মিলবে না তেল। ‘ন্যাশনাল ফুয়েল পাস’ এর মাধ্যমে রেশনিং প্রথায় প্রতি নাগরিকের জন্য বরাদ্দ করা হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ জ্বালানি তেল।

দেশটিতে ওষুধ, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের সংকট এখন চরমে। লোকজনকে রান্নার গ্যাস, কেরোসিন, পেট্রোল, চিনি, গুঁড়াদুধ এবং ওষুধের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেক পরিবারের বড়রা সন্তানদের খাওয়াতে নিজেরা একবেলা খেলে আরেকবেলা না খেয়ে থাকছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রাজধানী কলম্বোর বিভিন্ন সুপার মার্কেটে খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফুরিয়ে এসেছে। সুপার মার্কেটগুলোর বেশির ভাগ সেলফই খালি পড়ে আছে। ফলে কারও কাছে অর্থ থাকলেও মিলছে না পণ্য। খাদ্যপণ্যের দাম অধিকাংশ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এদিকে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে শিগগিরই সাধারণ মানুষের মাঝে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও নিত্যপণ্য বিতরণের জন্য ত্রাণ কর্মসূচি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা জানিয়েছেন, তারা রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার জন্য আলোচনা শুরু করেছেন। প্রাথমিক বৈঠক হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কার চাহিদা জানানো হয়েছে। এখন রাশিয়া শ্রীলঙ্কাকে কী ধরনের সুবিধা দেবে সেটা জানার অপেক্ষায় আছেন।

সর্বশেষ খবর