রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

সাত দলের সমন্বয়ে আসছে গণতন্ত্র মঞ্চ টার্গেট তিনটি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাত দলের সমন্বয়ে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে নতুন রাজনৈতিক মোর্চার আত্মপ্রকাশ ঘটছে আগামীকাল। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার আদায়, অন্তত দুই বছরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা বাস্তবায়ন- এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটবে। মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী হবেন জেএসডি সভাপতি আ স ম রব। গণতন্ত্র মঞ্চে থাকছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

জানতে চাইলে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ন্যূনতম দুই বছর এবং সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা বাস্তবায়ন- এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। খুব দ্রুত সময়েই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জানা যায়, সংগঠন আত্মপ্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে সভা করে আ স ম রবকে সমন্বয়কারী ঘোষণা করবে। সমন্বয়কারীই হবেন মুখপাত্র। তবে দুই মাস পর পর সমন্বয়কারী পরিবর্তন করা হতে পারে। এরপর জনস্বার্থ ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচির মাধ্যমে অন্য সমমনা দল ও সংগঠনগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এভাবে এক পর্যায়ে সব বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে পৃথকভাবে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বর্তমান সরকারের দ্রুত পদত্যাগ দাবি করে আসছেন সাত দলের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এ দাবিতে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন। একই দাবিতে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও একটি বৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠনে কাজ করছে। নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না- এমন আশঙ্কা নিয়ে বৈঠকগুলোতে মতৈক্য হয়।

জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ যেসব লক্ষ্য ও কর্মসূচিকে ভিত্তি করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে অগ্রসর হবে, এগুলো হচ্ছে- সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে। ইভিএম বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এক ব্যক্তির হাতে জবাবদিহি ছাড়া সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার ব্যবস্থার বদলে সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা।

গণতন্ত্র মঞ্চের কারিগররা বলছেন, রূপরেখায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা উল্লেখ থাকলেও এর বিশদ পরে তুলে ধরা হবে। অর্থাৎ জাতীয় সরকার হলে তা কীভাবে হবে, কার্যপ্রক্রিয়া কী- বিএনপির সঙ্গে বসে এসব ঠিক করা হবে। এই রূপরেখা তুলে ধরার পর এর ওপর ভিত্তি করে অন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তারা। তবে মূল বিষয় থাকছে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না এর দালিলিক প্রমাণ জনসমক্ষে তুলে ধরা। প্রথমে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরা হবে। তারা বলছেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সে কারণে আমরা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করছি। এই মঞ্চ সরকারের পতনের লক্ষ্যে গণআন্দোলন এবং জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকবে।

সর্বশেষ খবর