বিশ্বব্যাপী লিঙ্গসমতা দূর ও নারী ক্ষমতায়নের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সব নেতার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে তিন দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।
তিনি ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে সাধারণ পরিষদের সভাপতি কাসাবা কোরোসি আহূত ‘ইউএনজিএ প্ল্যাটফরম অব উইমেন লিডার্স’-এর উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে ভাষণদানের সময় এ প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘আজকের আন্তসংযুক্ত চ্যালেঞ্জে নারী নেতাদের দ্বারা রূপান্তরমূলক সমাধান’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংকটের সময় নারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সংকটের কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের যুক্ত করা দরকার।’ নারী ক্ষমতায়নে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘সব ধরনের গতানুগতিকতা ভেঙে এবং অদম্য সাহস ও নেতৃত্বের দক্ষতা দেখিয়ে নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, জটিল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানব জাতির জন্য ইতিবাচক ফল আনার লক্ষ্যে এ নেটওয়ার্ককে (ইউএনজিএ প্ল্যাটফরম অব উইমেন লিডার্স) ব্যবহার করার এটাই উপযুক্ত সময়। প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বকে উৎসাহিত করার জন্য জাতিসংঘের প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। এ বিষয়ে তিনি যে তিন দফা প্রস্তাব করেন তা হলো- লিঙ্গসমতাবিষয়ক উপদেষ্টা বোর্ডের স্থানীয়করণ, পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিক উপায়ে নারী নেতৃত্বাধীন সুশীলসমাজ-সংস্থাকে লালন ও সমর্থন এবং লিঙ্গসমতার জন্য সাধারণ এজেন্ডাকে শক্তিশালী করতে নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান। শেখ হাসিনা তাঁর প্রথম প্রস্তাবে লিঙ্গসমতা বিষয়ে উপদেষ্টা বোর্ড গঠনের সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি এখন স্থানীয়করণ করা দরকার। আমাদের সব স্তরে জেন্ডার চ্যাম্পিয়নদের প্রয়োজন, বিশেষ করে তৃণমূল স্তরে। এ ছাড়া নারী নেতৃত্বাধীন সুশীলসমাজ-সংস্থাকে পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিক উপায়ে লালনপালন এবং সমর্থন করা প্রয়োজন।’ তিনি তাঁর দ্বিতীয় দফায় বলেন, ‘এ ধরনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’ সবশেষে তিনি লিঙ্গসমতার জন্য তাঁদের সাধারণ এজেন্ডাকে শক্তিশালী করতে নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করার লক্ষ্যে সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘শুধু আমাদের নয়, সব নেতার লিঙ্গসমতা এবং নারী ক্ষমতায়নের অগ্রগতির জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত এবং তা উপস্থাপন করা উচিত।’
দিস ইজ এ নিউ মডেল : জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা কী বার্তা দেবেন তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেন, ‘কভিড-১৯ সমস্যা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা সমস্যা কোনো একক দেশ সমাধানে সক্ষম নয়। সেজন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আর বিভিন্ন দেশের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা বা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা সবাইকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যে করতে হবে। তাতে সাধারণ নাগরিকরা অসুবিধায় কম পড়বেন। এটাই হবে জাতিসংঘে চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধান বার্তা।’ ‘এর পাশাপাশি আমরা ক্লাইমেট ইস্যু উপস্থাপন করব। কারণ আমরা হলাম ক্লাইমেট ইস্যুতে লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড। আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুটি আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করব’ বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাতিসংঘে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আলোকে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ম্যানহাটানে ‘লটে প্যালেস’ হোটেলে স্থাপিত বাংলাদেশ মিশনের কন্ট্রোল রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।