শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে বক্তারা

সংসদ বিলুপ্ত করুন সেফ এক্সিট নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ বিলুপ্ত করুন সেফ এক্সিট নিন

রাজধানীতে গতকাল বিএনপির সমাবেশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি হাঁটুভাঙা নয়, বরং জনগণের আন্দোলন দেখে মনে হচ্ছে- আওয়ামী লীগেরই কোমর ভেঙে গেছে। এ জন্য আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। ‘বিএনপি হাঁটুভাঙা বলে লাঠির ওপর ভর করেছে’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে গতকাল বিকালে ছাত্রদলের এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে হামলা করে হতাহত করার বিষয়ে তিনি বলেন, এর জবাব একটাই। এ সরকারকে পতন ঘটাতে হবে, এদের সরাতে হবে। ইনশাআল্লাহ জনগণের বিজয় হবেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বুধবার ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে, বিএনপির নাকি হাঁটুভাঙা। আমাদের যে হাঁটু ভাঙেনি- এটা তো টের পাচ্ছেন। আর লাঠিও আমরা নিইনি। আপনাদের ইতোমধ্যেই কোমর ভেঙে গেছে। আপনারা শুধু লাঠি নয়, আপনারা ইতোমধ্যে রামদা-তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপর এখন হাঁটছেন। আপনারা জনগণের সঙ্গে নেই, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। সে জন্য আজকে আপনাদের ‘রাষ্ট্র যন্ত্র’ ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। তবে এখনো সময় আছে- ওই সব উল্টা-পাল্টা কথা না বলে আপনারা পদত্যাগ করুন শান্তিতে। সেফ এক্সিট নিন এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এ সমাবেশের আয়োজন করে। ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, এস এম জিলানী, মোনায়েম মুন্না, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান, রাকিবুল ইসলাম, আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রদলের নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে নয়াপল্টন ভিআইপি সড়কের একপাশে পিকআপ ভ্যানে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের বসার জন্য সড়কে কার্পেট বিছানো হয়। সমাবেশের কারণে ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। তাদের অনেকের হাতে জাতীয় পতাকা দেখা গেলেও কোনো লাঠি দেখা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহত নেতারাও মঞ্চে এসে নেতা-কর্মীদের সালাম দিয়ে চলে যান।

এর আগে বেলা ২টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে অংশ নিতে ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা পল্টনের আশপাশের গলিতে অবস্থান নেন। ৩টার পর থেকে তারা ব্যানারসহ ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় ছাত্রদল নেতারা হামলাকারীদের শাস্তির পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।

অন্যদিকে ছাত্রদলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশস্থল এবং আশপাশের বিভিন্ন গলিতে তারা অবস্থান নেন। এ ছাড়া সমাবেশস্থলের সড়কে রাখা হয় জলকামান ও প্রিজন ভ্যান। এদিকে সমাবেশে আসা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল আগে থেকেই।

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বিএনপি নেতারা বলেন, ‘এই ১৫ বছর ধরে তোমরা অত্যাচার চালাচ্ছো, গুম করছো, মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছো। কিন্তু আজকে জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের সব ছাত্রসমাজকে, তরুণ-যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ করে একটা দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। এটাই হবে প্রকৃত জবাব।’

 

 

সর্বশেষ খবর