শিরোনাম
শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পুলিশের কাছে থাকা অস্ত্রটি সেফগার্ডের জন্য : আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদায়ী পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা পুলিশকে যে অস্ত্রটি দিই, শুধু সেটি তার সেফগার্ডের জন্যই দিই। এটি সে তার আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করবে। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে নিহতের যেসব ঘটনা ঘটেছে তা অনাকাক্সিক্ষত। সেগুলোর ম্যাজিস্ট্রেসি এবং বিভাগীয় তদন্ত হবে।’ গতকাল রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে আয়োজিত আইজিপি’স প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এসব বলেন তিনি। আজ শুক্রবার আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩৪ বছরের কর্মজীবন শেষে অবসরে যাচ্ছেন। অবসরে যাওয়ার আগে শেষ কর্মদিবসে নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। আইজিপির বক্তব্যের শুরুতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল ও সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের। আইজিপি বলেন, ‘চাকরির শেষ দিন মানে আগামীকাল থেকে জীবনের একটি পাতা উল্টিয়ে নতুন পাতা পড়ার চেষ্টা। এর মানে আগামীকাল থেকে দেখা হবে না, কথা হবে না এমনটি নয়। সামাজিক জীব হিসেবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে, যেখানেই সুযোগ পাব একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।’ আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘যারা আমাকে নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চায় তাদের বিপক্ষে আবিষ্কার করেছেন, আমার বিরুদ্ধে নানা সময়ে অভিযোগ তুলেছেন, তাদের নিয়ে আজ কোনো অভিযোগ নাই, অনুযোগও নাই। আমি সারা দেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। সবাই সহযোগিতা জানিয়েছেন। দেশে কিছু নষ্ট রাজনীতির দুষ্টচক্রের মানুষকেও ধন্যবাদ। কারণ সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশ ও র‌্যাবের সম্পর্ক জোরদার করেছি। আনুষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে। আমি সরকারি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। যত অর্জন কিংবা সফলতার ক্রেডিট সরকারের এবং দেশের মানুষের। আর যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে, তা শুধু আমার। অর্জন শুধু রাষ্ট্রের, রাষ্ট্রনায়কদের খাতায় যুক্ত হবে, জনগণের খাতায় যুক্ত হবে। সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমার অর্জন পাওয়ার কিছু নেই।’ মানবাধিকার ও কক্সবাজারে ক্রসফায়ারে নিহত একরামুল সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি একটি লিগ্যাল বিষয়। যে পর্যন্ত বিষয়টি অন্যায্য বা অনৈতিক প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি। ঘটনাটি ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজনের মাধ্যমে। যে ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার সঙ্গে ওই মাঠপর্যায়ে লোকজনের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। তাই বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা একটি বিষয় দেখি, আমাদের কোনো সহকর্মী ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়েছেন কি না। কেউ যদি ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একরামের বিষয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে। আর পুলিশ ও র‌্যাবের বাহিনীর মধ্যে মানবাধিকার উন্নয়নে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করেছে। তারা পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পুলিশ ব্যর্থ হলে তারাও ব্যর্থ। এনজিওরা শত শত কোটি টাকা এনেছে মানবাধিকার শেখাতে।’

আইজিপি বলেন, ‘আমাদের সংবিধান হলো মানবাধিকারের মাতৃপ্রতিষ্ঠান। পুলিশের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে কয়েকটি ধাপে তাকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান রয়েছে। সুতরাং কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই।’

পেশাজীবনের দীর্ঘ সময়ের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘কর্মজীবনের মধ্যে ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২ বছর পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ডিএমপি কমিশনার, র‌্যাব ডিজি ও সর্বশেষ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনারা সমর্থন জুগিয়েছেন, দেশবাসীও সমর্থন জুগিয়েছেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ পুলিশের সবচেয়ে বড় পদে দায়িত্ব পালনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফরমালিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। নিরাপদ খাদ্য মানুষকে উপহার দেওয়ার জন্য শত শত টন ভেজাল খাদ্য আমরা ধ্বংস করেছি। খাবার থেকে ভেজাল মেশানো একটু হলেও কমেছে। দেশ এখন ফরমালিনমুক্ত। একসময় ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হতো। এখন সেটি ১০০ টনে নেমে এসেছে।’ আইজিপি বলেন, ‘কোনো মানুষই আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এর বাইরে আরেকটা বিষয় থাকে সামাজিক প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশার জন্যও অনেক কিছু করতে হয়েছে। দায়িত্ব পালনে যিনি অপর পাড়ে ছিলেন, লাইনের উল্টো দিকে ছিলেন, তিনি নিজেকে প্রতিপক্ষ মনে করলে সঠিক হবে না। খুন হলেও দুটো পক্ষ হয়ে যায়। ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত। পুলিশ দুই দলকে খুশি করতে পারে না। এ কারণে এক পক্ষ সব সময় ভুল বোঝে। আইনি দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ায় অনেকেই বিপক্ষে গেছেন। সেটা বিদায়লগ্নে আর বলতে চাই না।’ ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এটি প্রায় ৪০০ বছরের সমস্যা ছিল। জিম্মিদশা থেকে ওই এলাকার মানুষকে মুক্ত করতে পেরেছি।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাত : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাত করেছেন আইজপি ড. বেনজীর আহমেদ। এ সময় সফলভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি। সাক্ষাতকালে বিদায়ী আইজিপি দায়িত্ব পালনে দিকনির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতা  প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এ সাক্ষতকার অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব সংযুক্ত মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর