রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

তোয়াব খান আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

তোয়াব খান  আর নেই

দৈনিক বাংলার সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান আর নেই। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে গতকাল দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এর আগে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মৃত্যুকালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্ব^জন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তোয়াব খানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। তোয়াব খানের ছোট ভাই ওবায়দুল কবির বলেন, তোয়াব খানের একমাত্র মেয়ে তানিয়া খান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। আজ বিকালে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। তোয়াব খানের মৃতদেহ আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ে দৈনিক বাংলা কার্যালয়ে নেওয়ার পর সেখানে প্রথম জানাজা হবে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় শ্রদ্ধা জানানো হবে। বেলা ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মৃতদেহ রাখা হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মৃতদেহ নেওয়া হবে গুলশানে তাঁর নিজ বাসভবনে। বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বরেণ্য এই সাংবাদিককে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।

তোয়াব খানের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও পেশাজীবী সংগঠন শোক বার্তা দিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক তোয়াব খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল, সাতক্ষীরার রসুলপুর গ্রামে। তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে। ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক হন। এরপর ১৯৬৪ সালে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তাঁর আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিন্ডির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। ১৯৮৭-১৯৯১ মেয়াদে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদেরও প্রেস সচিব ছিলেন। তিনি প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। জনকণ্ঠের প্রকাশনার শুরু (১৯৯২) থেকেই তিনি গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। এরপর নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি। সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য সরকার তাঁকে ২০১৬ সালে একুশে পদক প্রদান করে।

পেশা জীবনের শুরু থেকেই তোয়াব খান সাংবাদিকতায় নতুনত্ব, আধুনিকতা ও সৃষ্টিশীলতার উজ্জ্বল এবং অনুকরণীয় প্রমাণ রেখেছেন। তিনি এ দেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় অনন্য একটি প্রতিষ্ঠান। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত বহু প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতিমান সাংবাদিকের প্রতিভা লালন এবং বিকাশে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। তোয়াব খান পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চাকরিচ্যুত এবং কারা নির্যাতনও ভোগ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘ফিরে দেখা আজ এবং কাল’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর