বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নির্বাচনী দাবি-দাওয়ার হিড়িক

টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের পাশাপাশি রেশন সুবিধা দেওয়ার দাবি কর্মচারী সংগঠনগুলোর, কঠোর কর্মসূচির হুমকি, নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন ও অন্তর্বর্তীকালীন ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দাবি, জাতীয়করণসহ আট দফা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের

উবায়দুল্লাহ বাদল

প্রত্যেক সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। অতীতে কোনো কোনো সংগঠন সফলও হয়েছে। সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ সময়ে এবারও সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন পেশার সংগঠন।

এবার তারা হাজির হয়েছেন পেশাসংশ্লিষ্ট কমবেশি ৪৮টি দাবি নিয়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সরকারি চাকুরেদের টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল ও রেশন দেওয়ার দাবি বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির। পিআইওদের নবম গ্রেড এবং ডিআরআরও পদটি ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীতকরণসহ পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবি বাংলাদেশ পিআইও সমিতির। নবম জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার ২০০ টাকা বেতন নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতি। ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড, সহকারী প্রধান শিক্ষক নবম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের অষ্টম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ সব শিক্ষকের বেতন জটিলতা নিরসনসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এসব দাবি-দাওয়া আদায়ে কোনো কোনো সংগঠন রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ কেউ পালন করছে ধর্মঘট ও কর্মবিরতি। এমনকি আমরণ অনশনও পালন করেছে কোনো কোনো সংগঠন। আবার কেউ নিজ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি-দাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত আসেনি তেমন কোনো ইতিবাচক ফল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘এ ধরনের আন্দোলন আমাদের দেশে এখন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সবাই চায় মেয়াদের শেষ সময়ে সরকারের ওপর আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে। সরকারও ভোটের জন্য ব্যস্ত। ফলে সরকারের দিক থেকেও ক্ষেত্রবিশেষ তেমন কোনো যাচাই-বাছাই বা গুণগত মান না দেখেই ভোটের প্রতি দৃষ্টি রেখে অনেক দাবি মেনে নেওয়া হয়। অতীতেও এ ধরনের নজির রয়েছে।’ বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা রাজনীতির মাঠে অনেকটাই সরব। তাদের পাশাপাশি সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবি-দাওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এর মধ্যে সরকারি চাকুরেদের টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। পাশাপাশি তারা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো রেশন সুবিধা দাবি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকেও চিঠি দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ বিভাগকে চিঠি লিখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর অগ্রগতি জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামাল জানান, ‘তাদের আবেদনটি বর্তমানে যাচাই-বাছাই করছে অর্থ বিভাগ। অষ্টম পে-স্কেল জারির পর প্রায় আট বছর পার হয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বিলসহ কয়েক গুণ বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট আর্থিক সুবিধার ব্যাপক বৈষম্য দূর করতে দুদকের ন্যায় ন্যায্যমূল্যে রেশন সুবিধা প্রদানসহ টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল চাই।’ প্রায় এক যুগ আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ কার্যকর হলেও এর আওতায় কর্মরত জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও) জনবলকাঠামো ও নিয়োগবিধি এখনো অনুমোদন হয়নি। ফলে ডিআরআরও-পিআইওরা কাক্সিক্ষত আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিত্ব করলেও পাচ্ছেন না সামাজিক মর্যাদা। এবার বিষয়টির চূড়ান্ত সুরাহা চায় ডিআরআরও-পিআইওদের সংগঠন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ। জনবলকাঠামো ও নিয়োগবিধি অনুমোদন এবং পদ দুটির আপগ্রেডেশনসহ পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে সংগঠন তিনটি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর