বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার

বিশ্ব অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান অর্থমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে সরকার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এ নিয়ে আলোচনা এবং চিঠি চালাচালি হলেও সম্প্রতি এ ইস্যুতে সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের আনুষ্ঠানিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। অবশ্য আইএমএফ এর আগে বলেছে, বাংলাদেশ এ ঋণ পাওয়ার সক্ষমতা ও যোগ্যতা অর্জন করেছে। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলমান সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। গতকাল ঢাকা সফররত আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। বুধবার ছিল প্রথম বৈঠক। আলোচনা শুরু হয়েছে, সামনে আরও আলোচনা চলবে। গতকালই আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ১৫ দিনের সফরে ঢাকায় আসে। আইএমএফ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দ এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটি ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে। এই সময়ে তারা বাংলাদেশের জন্য আগামীর ঋণ কর্মসূচি এবং নতুন করে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিতে আর্থিক খাতের সংস্কার ও নীতি নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে। প্রতিনিধি দলটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশে সরকারের নীতিনির্ধারক এবং অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করবে। জানা গেছে, বাংলাদেশের সামনে এখন আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার আশা। এরই অংশ হিসেবে আইএমএফের একটি দল এখন ঢাকায়। জুলাই মাসে বাংলাদেশ ঋণ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল আইএমএফের কাছে। চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফের বার্ষিক সভায় ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার এক ফাঁকে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বাধীন দল আইএমএফের সঙ্গে এক দফা আলোচনাও করে। জানা গেছে, আইএমএফের এবারের ঢাকায় আসা মূলত বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতের সংস্কার এবং নীতি নিয়ে আলোচনা করা। সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মকর্তা পর্যায়ে চুক্তির অগ্রগতির জন্য আলোচনা করা। আলোচনা হবে আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) কর্মসূচি এবং নতুন উদ্যোগ, সহনশীলতা ও টেকসই সহায়তা তহবিল (আরএসটিএফ) কর্মসূচি থেকে এ ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে।

আরএসটিএফ ঋণের অধীনে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে অর্থায়ন করা হয়। আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য চাওয়া চিঠিতে এই আরএসটিএফের কথাও উল্লেখ করেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়ন, রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রমকে গতিশীল করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, আয়কর আইন ও শুল্ক আইন প্রণয়ন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমানো, ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমানো, রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি ঠিক করাসহ নানা বিষয় থাকবে আইএমএফের আলোচনার মধ্যে।

জানা গেছে, ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে লেনদেনের ভারসাম্য বাবদ ১৫০ কোটি ডলার এবং বাজেট সহায়তা বাবদ ১৫০ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে। বাকি ১৫০ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে আইএমএফের আরএসটিএফ থেকে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে শর্ত না মিললে সরকার বৈশ্বিক ঋণদাতার কাছ থেকে ঋণ নেবে না।’

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক শক্তি আগের চেয়ে ভালো। সরকার আইএমএফের শর্ত পছন্দ না করলে আইএমএফ ক্রেডিট নেবে না।’

বাজেট ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ঋণদাতার শর্ত অনুযায়ী বাজেটের ভর্তুকি ব্যয় কমাতে শুরু করেছি। তাই এটি আগামী কয়েক বছরের জন্য অব্যাহত রাখা উচিত।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ভর্তুকি ১৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা দেশের জিডিপির ১.৯ শতাংশ। অক্টোবরে রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) আন্তর্জাতিক বাজারে বিইআরসি প্রাকৃতিক গ্যাসের শুল্ক বৃদ্ধি এবং তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক প্রায় ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি চেয়েছিল। এদিকে মানবতার কল্যাণে বিশ্ব অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) বোর্ড অব গভর্নরসের বার্ষিক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পাশাপাশি এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে বাংলাদেশকে প্রদত্ত সাম্প্রতিক বাজেট ও ভ্যাকসিন সহায়তার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি এআইআইবিকে ধন্যবাদ জানান।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার দক্ষতার সঙ্গে করোনা মহামারি মোকাবিলা করেছে। বিগত অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতি পূর্বের ধারাবাহিকতায় ফিরে আসছে। বর্তমানের চলমান চ্যালেঞ্জগুলোকে আমলে নিয়েই বাংলাদেশ তার উন্নয়নের পথে রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের লক্ষ্য রয়েছে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল, ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার। এই লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক এবং ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগের জন্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসহ এর সব উন্নয়ন সহযোগীর সমর্থন প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রী মানবতার স্বার্থে বিশ্ব অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ নিশ্চিত করতে সভায় উপস্থিত এবং সভার বাইরের বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সভায় বক্তব্য রাখেন চীনের গভর্নর কুন লিউ, ঘানার গভর্নর কেন ওফোরি-আত্তা, ভারতের গভর্নর নির্মলা সীতারমণ, পাকিস্তানের গভর্নর সরদার আয়াজ সাদিক, সিঙ্গাপুরের গভর্নর ইন্দ্রাণী রাজা, উজবেকিস্তানের গভর্নর জামশিদ খোদজায়েভ, আজারবাইজানের অস্থায়ী বিকল্প গভর্নর সামাদ বশিরলি, জার্মানির অস্থায়ী বিকল্প গভর্নর রুডিগার ফন ক্লিস্ট, নিউজিল্যান্ডের অস্থায়ী বিকল্প গভর্নর নাটালি লাবুসচেন ও স্পেনের অস্থায়ী বিকল্প গভর্নর লিওনার্দো রদ্রিগেজ গার্সিয়া।

সর্বশেষ খবর