শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিতর্কিত কাউকে নমিনেশন নয় পরীক্ষিতদের মূল্যায়নের তাগিদ

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর

রফিকুল ইসলাম রনি

বিতর্কিত কাউকে নমিনেশন নয় পরীক্ষিতদের মূল্যায়নের তাগিদ

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২৪ ডিসেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। এতে পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করতে হবে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিতর্কিত কাউকে নমিনেশন দেওয়া হবে না। গতকাল বিকালে গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি বছর দুই দিনব্যাপী জমকালো সম্মেলন হলেও এবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কথা বিবেচনায় নিয়ে সাদামাটাভাবে সম্মেলন করবে ক্ষমতাসীন দলটি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক চলাকালে সন্ধ্যায় গণভবনের গেটে এসে এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব তথ্য জানান। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলন এক দিনে করা হবে। সম্মেলনও তেমন জাঁকজমকপূর্ণ হবে না। বৈশ্বিক সংকটের কারণে কৃচ্ছ্রতা সাধন করা হবে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বিকালে কাউন্সিল অধিবেশন এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন।  বৈঠকের মাঝখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিসহ বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনে এবার বিদেশি অতিথিরা আসবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের কোনো দিন ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ দফতর সম্পাদক সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অবহিত করবেন। দেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর। নির্ধারিত সময়ের তিন বছর পরই আবার জাতীয় সম্মেলন করতে যাচ্ছে দলটি।  বিফ্রিংয়ে এই কর্মসূচির কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগের সমাবেশ হবে। সেখানে নেত্রী সরাসরি অংশগ্রহণ করবেন। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের কোনো জনসভায় অংশ নেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্য এবং শোক প্রস্তাব পাঠের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল ইসলাম ঠা-ু, আনোয়ার হোসেন, মেরিনা জাহান কবিতা, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সফিউল আলম নাদেল, সাখাওয়াত হোসেন সফিক তাদের বিভাগীয় সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন।

বিতর্কিত কাউকে নমিনেশন নয়, দৌড়ে পাস করতে হবে : বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি মাঠে টিম পাঠিয়েছি। জরিপ চলছে। সবদিক বিবেচনায় প্রার্থী দেওয়া হবে। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি, তৃণমূলে যাদের সংযোগ নেই তাদের এবার নমিনেশন দেওয়া হবে না। কারণ এবার নির্বাচন কঠিন হবে। বিএনপি এখন যতই বলুক, নির্বাচনে অংশ নেবে না, আসলে তারা সঠিক সময়ে পুরো শক্তি নিয়োগ করেই ভোট করবে। সে কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। কাজেই যারা মনে করেন নমিনেশন পেলেই পাস হয়ে যাবে, সে চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে হবে। কাউকে পাশ করানোর দায়িত্ব নিতে পারব না। এবার দৌড়ে পাস করতে হবে। বসে পাস করার সুযোগ নেই। সেভাবেই দলীয় নমিনেশন দেওয়া হবে।

বৈশ্বিক মন্দার কারণে নতুন প্রকল্প নয়, পুরনো কাজের বেশি প্রচার করুন : বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ভারতের মুর্শিদাবাদের একটি নদীর সঙ্গে পদ্মা নদীর সংযোগ স্থাপনের দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, এটা তো একক কোনো দেশের ব্যাপার না। দুই দেশের সরকারের ব্যাপার। এরপর লিটন রাজশাহী সিটিতে আরও বেশি উন্নয়ন কাজ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজশাহীতে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার কাজ করেছি। বিশ্বে এখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে হবে। সে কারণে আপাতত বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হলে নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে না।

গণসংযোগ ও ওঠান বৈঠকে গুরুত্ব : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ ও ওঠান বৈঠকে গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের প্রত্যেক নেতা-কর্মীর দায়িত্ব হবে দলের উন্নয়ন প্রচার করা। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সেগুলো বেশি করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।

ডাক পাচ্ছেন জিয়ার শাসনামলে সামরিক আদালতে দন্ডিতদের পরিবারের সদস্যরা : বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাক পাচ্ছেন ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি কার্যকর এবং কারাদন্ডপ্রাপ্ত পরিবারের সদস্যরা। আগামী নভেম্বরের যে কোনো দিন গণভবনে জিয়ার শাসনামলে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সেসব পরিবারের সদস্যরা ডাক পাবেন। একই সঙ্গে যারা দন্ডিত হয়েছিলেন এখন জীবিত রয়েছেন তাদেরও ডাকা হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

১/১১’র পরীক্ষিতদের মূল্যায়নের তাগিদ : দীর্ঘ বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেন। একপর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১/১১ সময়ে যারা দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন, পরীক্ষিত- তারা যেন বাদ না পড়েন। দলের বিভিন্ন জায়গায় পদ-পদবিতে বসাতে হবে। কাজেই ১/১১’র পরীক্ষিত নেতাদের সবার আগে দলে সুযোগ দিতে হবে।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করতে রাজি না হলে ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনা : আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম চার সংগঠনের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। আগামী ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের আগেই এই সংগঠনগুলোর সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিন দিনের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। যারা সম্মেলন করতে আগ্রহী হবে না তাদের কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় প্রধান। একই সঙ্গে রেওয়াজ অনুযায়ী দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে।

জনসভায় নামছেন শেখ হাসিনা : জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে একটি সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে তিনি বলেছেন, যেসব জেলায় যাওয়া হয়নি, সেসব জেলায় আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাব। তবে যেসব জেলায় সম্মেলন হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি সেখানে যাব না। এমনকি গণভবনে জেলা-উপজেলা নেতাদের ডাকা হবে, সেখানেও তাদের ডাকব না।

সর্বশেষ খবর