রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

হাস্যকর নামে দল নিবন্ধন আবেদন

মুসকিল লীগ, ইত্যাদি পার্টি, বেকার সমাজ, বৈরাবরীসহ বিভিন্ন নামে ইসির নিবন্ধন চায় ৪০ রাজনৈতিক দল

গোলাম রাব্বানী

হাস্যকর নামে দল নিবন্ধন আবেদন

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে অদ্ভুত-হাস্যকর নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এসব দল অনেকটাই প্যাডসর্বস্ব। কোনো দলের সাইন বোর্ড থাকলেও নিজস্ব অফিস নেই। অনেকেই নিজের বাসার ঠিকানা বা দোকানের ঠিকানায় দলীয় অফিস দেখিয়েছেন।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালেও নামসর্বস্ব ৭৬ দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এবারেও অদ্ভুত-হাস্যকর ও হরেক নামে অনেক দল ইসির নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে। আজ আবেদন দাখিলের শেষ দিনে হয়তো আরও আবেদন আসতে পারে। তারা বলছেন, এবারের নতুন ৪০ দলের মধ্যে অদ্ভুত-হাস্যকর নামগুলো হচ্ছে- মুসকিল লীগ, ইত্যাদি পার্টি, বেকার সমাজ,  বৈরাবরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও ননপ্রবাসী কল্যাণ দল, সর্বজনীন দল, গজো প্রভৃতি।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে আবেদন করা একটি দলও নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়নি। ওই সময় নাকফুল বাংলাদেশ, ঘুষ নির্মূল পার্টিসহ অদ্ভুত নামের অনেক রাজনৈতিক দল আবেদন করেছিল। আগ্রহী দলগুলো শর্ত পূরণ করার কথা বললেও যাচাই-বাছাইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তবে ভোটের পরে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় দুটি দল। এবার এখন পর্যন্ত যে ৪০টি দল নিবন্ধন চেয়ে ইসিতে আবেদন করে, সেগুলো হচ্ছে- নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, মুসকিল লীগ, নতুন বাংলা, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএমএ), বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ), বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বৈরাবরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও ননপ্রবাসী কল্যাণ দল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ আম জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট (বিডিএম), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি (বাংলাদেশ টিজেপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, বাংলাদেশ এলডিপি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ, গণ রাজনৈতিক জোট-গজো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), নতুন ধারা বাংলাদেশ-এনডিবি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় দল, কৃষক শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ ইত্যাদি। এদিকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো ঠিকঠাক শর্ত পালন করছে কি না, তার তদারকিতে নামছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে দলের অফিস; নির্বাচিত কমিটি এবং সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না তা জানতে চেয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে তথ্য দিতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে দল নিবন্ধনের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে। সে ক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার আগেই নতুন কোনো দল নিবন্ধন পাবে কি না এবং পুরনো কোনো দল নিবন্ধন হারাবে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, স্বাভাবিকভাবেই (দলগুলোকে) চিঠিপত্র দেই; কিছু তথ্য দেন। আমরা কিছুটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি, মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য পাঠাই, তারা যাচাই করে আমাদের পাঠান। যদি সবগুলো (দলগুলোর নিবন্ধনশর্ত প্রতিপালন) তথ্য ঠিক থাকে, তাহলে তো নিবন্ধন টিকে যায়। শর্ত ঠিকভাবে প্রতিপালন না করলে, যাচাই-বাছাইয়ের পর সঠিক তথ্য না পেলে কমিশন পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে নিবন্ধিত দলের সব স্তরে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিবন্ধিত কোনো দল তা পূরণ করতে পারেনি। বর্তমান কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার শর্ত পূরণের সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর