বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বর্তমানে আমাদের তিন সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমানে আমাদের তিন সংকট

বদিউল আলম মজুমদার

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, তিনটি বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। প্রথমটি হলো- অর্থনৈতিক সংকট। অপর দুটি হলো কার্যকর গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি ও সুশাসনের অভাব। তিনটি সংকট একইসূত্রে গাঁথা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংকট দূর না করলে অর্থনৈতিক দুরবস্থাও কাটবে না। তখন আইএমএফ প্রদত্ত ঋণ ‘ফুটো কলসি সিনড্রম’ বা ছিদ্রযুক্ত কলসিতে পানি ঢালার মতোই হতে পারে। পানি যতই ঢালা হোক,  কলসি ভরবে না। গতকাল সুজনের উদ্যোগে ‘অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের পূর্বশর্ত রাজনৈতিক সংস্কার’ শীর্ষক একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সুজন সহসভাপতি সাবেক বিচারপতি এম এম মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। সুজন নেতাদের মধ্যে নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আহসান এইচ মনসুর, ড. তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন প্রমুখ যুক্ত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণতন্ত্রের প্রধানতম অনুষঙ্গ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি একতরফা নির্বাচনের কারণে সরকার আর জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। যেহেতু পাঁচ বছর অন্তর ‘নির্বাচিত’ হতে ক্ষমতাসীনদের আর জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয় না- তাই জনগণের কল্যাণে কাজ করার দায়বদ্ধতাও সরকারের নেই। যারা তাদের ক্ষমতায় এনেছেন ও ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছেন এবং পরবর্তী সময়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে যাদের ওপর নির্ভর করতে হবে, সরকারকে সেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরই সন্তুষ্ট রাখতে হয়। ভোটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত দায়বদ্ধতার অতি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো এখানে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, আজকের এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে সুশাসনের অভাব। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের অভাব, ন্যায়পরায়ণতার অনপুস্থিতি, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের অভাব। সরকারের আশীর্বাদপুষ্টরা যে যেখানে পারছে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এমতাবস্থায় আইএমএফ প্রদত্ত ঋণ ‘ফুটো কলসি সিনড্রম’ বা ছিদ্রযুক্ত কলসিতে পানি ঢালার মতোই হতে পারে। পানি যতই ঢালা হোক, কলসি যেমন ভরবে না, তেমনি গণতন্ত্রের ঘাটতি পূরণ এবং দুর্নীতির লাগাম টানা সম্ভব না হলে অর্থনৈতিক সংকটও কাটবে না। কেননা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট সমাধান একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি সম্ভব নয়। ড. বদিউল আলম মজুমদার  সুজনের পক্ষে ২১ দফা রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের এখন সর্বাত্মক চেষ্টার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমিয়ে আনা, রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকানো, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। সামনে নির্বাচনের কথা চিন্তা করে হলেও সরকারকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে। সরকারি ব্যয়ে সুশাসন আনতে হবে। সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে পলিসিতে সংস্কার আনতে হবে।

আইএমএফের দেওয়া শর্ত আমাদের জন্য কিছুটা হলেও সংস্কার কাজ শুরু করতে সাহায্য করবে। ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের জনসমর্থন প্রায় সমান, তাই সমঝোতা না হলে আমাদের অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, আমাদের ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়ছেই। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমাদের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেই। এই দায়িত্বটা কার?

মূল্যস্ফীতির প্রকোপে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। এসব সংকট দূরীকরণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় সমঝোতা এখন সময়ের দাবি। সুজন প্রস্তাবিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো- রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার, নির্বাচনকালীন সরকার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, একটি নতুন সামাজিক চুক্তি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক মানসিকতার অবসান, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন।

সর্বশেষ খবর