শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পদের তিন গুণ কর্মকর্তা

পদ নেই তবু পদোন্নতি আরও ১৭৯ যুগ্মসচিব কাজ আগের ডেস্কেই

উবায়দুল্লাহ বাদল

পদের তিন গুণ কর্মকর্তা

উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২১তম ব্যাচের ১২৮ জনসহ মোট ১৭৯ কর্মকর্তা এ পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকি কর্মকর্তারা আগের বঞ্চিত ও সদ্যবিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের, যারা প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। গতকাল এ-সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপনে ১৭৫ জনের নাম প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পদোন্নতিপ্রাপ্তের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের পিএস ও শিক্ষামন্ত্রীর পিএস এবং ১৩ জেলার ডিসি। এর মধ্যে ১৬৫ জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য সরকারি দফতরে কর্মরত আছেন। ১০ জন বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনে কর্মরত। বাকি চারজন শিক্ষা ছুটি/লিয়েনে থাকায় তারা ফিরলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগদানপত্র ইমেইলে

([email protected]) পাঠাতে বলা হয়েছে। বর্তমানে এ পদে কর্মরত আছেন ৭১৩ কর্মকর্তা। এ পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে ১৭৫ জনকে যুগ্মসচিব করা হয়। এর ফলে এ পদে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াল ৮৯২-এ। অথচ অনুমোদিত পদের সংখ্যা মাত্র ৩৩০। অর্থাৎ যুগ্মসচিবের পদের চেয়ে প্রায় তিন গুণ কর্মকর্তা হলো প্রশাসনে। এ অবস্থায় পদ না থাকায় পদোন্নতি পাওয়া অধিকাংশ কর্মকর্তাকে আগের পদেই (ইন-সিটু) কাজ করতে হবে অথবা ওএসডি থাকতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, রেওয়াজ অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ইতোমধ্যে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। এর মধ্যে বিসিএস ২০ ব্যাচের নয়জন, নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ২১ ব্যাচের ১৩৬ জন এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে উপসচিব হওয়া ৩০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিসিএস ২১ ব্যাচের ১৮১ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১৫৩ জন পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। এ ছাড়া সদ্যবিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের নয়জন কর্মকর্তাও পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। এর বাইরে বিভিন্ন সময় পদোন্নতিবঞ্চিত (লেফট আউট) ১০০-এর মতো কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্যাডারের সমসংখ্যক কর্মকর্তাকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। ফলে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যাদের পদোন্নতি হয়নি তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। কারও কারও নানা ধরনের অসংগতিও রয়েছে। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করার সময় অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে অনেকের পদোন্নতি হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, স্থায়ী পদ না থাকায় এমনিতেই অনেক যুগ্মসচিবকে নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে, তার ওপর নতুন করে পদোন্নতি দেওয়া হলো। পদোন্নতিপ্রাপ্ত বেশির ভাগ যুগ্মসচিবকে বর্তমান কর্মস্থলে ইন-সিটু (উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা স্থানে) থাকতে হবে। পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা হওয়ায় পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইন-সিটু (আগের পদে রাখা) করা হবে। অর্থাৎ এসব কর্মকর্তাকে আগের পদেই কাজ করতে হবে। ফলে পদোন্নতি পাওয়ার পরও তারা নতুন ডেস্ক পাচ্ছেন না তা প্রায় নিশ্চিত। অতীতেও পদোন্নতির পর পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় আগের পদেই কাজ করতে হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

এর আগে চলতি বছরের ২৯ জুন বিসিএস ২০তম ব্যাচসহ অন্যান্য ব্যাচের ৮৪ জন কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছিল সরকার। মাত্র চার মাসের মাথায় আবারও পৌনে দুই শ কর্মকর্তাকে একই পদে পদোন্নতি দেওয়া হলো।

‘সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে- যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাকে ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে কমপক্ষে পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা উপসচিব পদে কমপক্ষে তিন বছর চাকরিসহ ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে কোনো কর্মকর্তা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর