কেউ বৈধ লাইসেন্স ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই শাস্তির মুখোমুখি হবেন যদি কেউ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য, নথি, বইপত্র বা দলিল-দস্তাবেজ ইচ্ছাকৃত বিনষ্ট, ধ্বংস, পরিবর্তন বা ভুলভাবে উপস্থাপন করেন। এমনকি এই আইনের ক্ষমতাবলে জারিকৃত প্রবিধান ও নির্দেশনা লঙ্ঘন, বাধাগ্রস্ত বা এরূপ কর্মকান্ডে সহায়তা করলে একই দন্ডে দন্ডিত হবেন। আদেশ প্রদানের ১৪ দিনের মধ্যে অবশ্যই জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ব্যর্থ হলে নোটিস ছাড়াই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব হতে জরিমানার অর্থ আদায় করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন বিধান রেখে ‘বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২’এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অনুমোদনের জন্য শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোদ রাজধানীতেই চলছে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা। লাইসেন্সধারী এমন প্রতিষ্ঠান মাত্র ২৩৫টি হলেও অনুমোদনহীন মানি এক্সচেঞ্জের সংখ্যা ৬০০-এর বেশি। নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে অস্থির দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। আর বৈধ ডলার ব্যবসার কারসাজিতে কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের কারণেই মূলত বেড়েছে ডলারের দাম। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ ডলার ব্যবসায় লাগাম টানতে দ্রুত আইনটি কার্যকর করতে চায় সরকার। জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রণীত এই আইনটি ৭৫ বছর পর এসে সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রস্তাবিত আইনটিও বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২ নামে অভিহিত হবে। আগের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান ছিল চার বছর। ২০১৫ সালের সংশোধিত আইনে এটি বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সাত বছর করা হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনেও সাত বছর সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৪৭ সালের আইনে আর্থিক জরিমানার কোনো বিধান ছিল না। তবে ২০১৫ সালের সংশোধিত আইনে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। তখন জরিমানার অঙ্ক নির্দিষ্ট করে বলা ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে জরিমানার বিষয়টি নির্দিষ্ট করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আইনের লঙ্ঘন ও দন্ডের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা করেন তাহলে ন্যূনতম ৩ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা ন্যূনতম ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ব্যবসা করার জন্য প্রাপ্ত লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়ার পরও ব্যবসা করলে একই শাস্তির মুখে পড়তে হবে। যে কোনো মুদ্রা, সিকিউরিটিজ, স্বর্ণ বা রৌপ্য বা দ্রব্যসামগ্রী বা অন্যান্য সম্পত্তির ক্ষেত্রে উক্ত লঙ্ঘন সংঘটিত হলে সাজা প্রদানের অতিরিক্ত হিসাবে ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনবোধে উহা বাজেয়াপ্ত করা যাবে। কোনো ব্যক্তি এই আইনের বিধানাবলি বা এই আইনের ক্ষমতাবলে জারিকৃত প্রবিধান ও নির্দেশনা লঙ্ঘন, বাধাগ্রস্ত বা এরূপ কর্মকান্ডে সহায়তা করলে একই দন্ডে দন্ডিত হবেন। অন্যদিকে কোনো অনুমোদিত ডিলার, মানি চেঞ্জার ও সীমিত মানি চেঞ্জারের স্বত্বাধিকারী, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্যান্য কর্মকর্তা এই আইনের অধীনে কোনো নিরীক্ষকের কর্ম সম্পাদনে বাধা প্রদান করেন, কোনো হিসাব বহি বা নথিপত্র বিনষ্ট, ধ্বংস, পরিবর্তন বা ভুলভাবে উপস্থাপন করেন, প্রতারণার উদ্দেশ্যে কোনো মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশ করেন বা প্রাসঙ্গিক তথ্য সন্নিবেশ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যূনতম ৩ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে। জরিমানার আদেশ প্রদানের ১৪ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জরিমানা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ধরনের নোটিস না দিয়েই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক হিসাব হতে উক্ত জরিমানার অর্থ আদায় করতে পারবে। এই আইন কার্যকর হলে তা বাস্তবায়নে প্রতি জেলায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। প্রত্যেক দায়রা জজ তার এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে গণ্য হবেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ ছাড়া এই আইনের অধীন দন্ডযোগ্য কোনো অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আমলে নিতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১৯৪৭ সালে প্রণীত আইনটি প্রথমবার সংশোধন হয় ১৯৭৬ সালে। এরপর আরও ৩০ বার সংশোধন হয়েছে এ আইনটি। তবে বড় ধরনের সংশোধন হয়েছে ২০০৩ ও সব শেষ ২০১৫ সালে। তিনি বলেন, অংশীজনের মতামত নেওয়ার পর আইনটির খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় তা ভেটিং করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর প্রস্তাবিত খসড়াটি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা জাতীয় সংসদে তোলা হবে। আইনটি বিল আকারে পাসের পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর সাপেক্ষে কার্যকর করা হবে।