শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা, ফরিদপুরে সমবেত বিএনপি নেতা-কর্মীরা

আজ বিভাগীয় সমাবেশ

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা, ফরিদপুরে সমবেত বিএনপি নেতা-কর্মীরা

ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশস্থল গতকাল সন্ধ্যায়ই ছিল লোকে লোকারণ্য -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ আজ। সব ধরনের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই সেখানে সমবেত হচ্ছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী। গতকাল সন্ধ্যায়ই সমাবেশস্থল ছিল লোকে লোকারণ্য। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, পথে পথে তাদের নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পুলিশ যানবাহন আটকে দিয়েছে। অনেকে একসঙ্গে থাকলে তাদের ফরিদপুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরাও বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েছে।

বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের আগে যানবাহন চলাচল বন্ধ করার ঘটনায় তারা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তারা সমাবেশের তিন দিন আগ থেকেই ফরিদপুরে আসতে থাকেন। বুধবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাস-ট্রাকে আসতে থাকেন। বৃহত্তর ফরিদপুরে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট চলায় গতকাল সকাল থেকে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলযোগে এবং পায়ে হেঁটে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সমাবেশে আসতে দেখা গেছে।

গতকাল দুপুরের পর রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানের নেতা-কর্মীরা ট্রেনে চড়ে সমাবেশস্থলে আসেন। তিন দিন আগে যারা সমাবেশস্থলে এসেছেন তারা আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট স্কুল মাঠে রাতযাপন করেছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনদের ও বিএনপি নেতাদের বাসায় থাকছেন। এ সমাবেশ ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তপ্ত অবস্থা থাকলেও এখন পর্যন্ত বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সমাবেশস্থল কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের পূর্ব পাশে বিশাল মঞ্চ বানানো হয়েছে। মাঠ ও মাঠের বাইরে লাগানো হয়েছে শতাধিক মাইক। আলোকসজ্জা হয়েছে মাঠজুড়ে। নারীদের বসার জন্য আলাদা স্থান করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের রাতযাপনের জন্য মাঠের বাইরে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। স্কুলের পেছনে রান্নার আয়োজন করা হয়েছে। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িতেও থাকা ও রান্নার আয়োজন চলে। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে তদারকি কমিটি সমাবেশে নিরাপত্তা দেখভাল করছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম বলেন, সমাবেশে যাতে লোকজন আসতে না পারে সে জন্য সব কৌশলই নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তিনি বলেন, কোনো কৌশলেই বিএনপির সমাবেশ বানচাল করা যাবে না।

ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, মহাসমাবেশের জন্য আমরা ফরিদপুর শহরে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠসহ চারটি স্থানের যে কোনো একটি চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কোমরপুর স্কুলে মাঠে অনুমতি দেয়। প্রশাসন এবং সরকারি দলের নেতারা সমাবেশ বানচাল করতে এখনো সোচ্চার। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে। একসঙ্গে বেশি সংখ্যক লোক দেখলেই তারা ফরিদপুরে ঢুকতে দিচ্ছে না। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে এ সরকারকে লালকার্ড দেখাবে জনগণ। মহাসমাবেশের সমন্বয়ক ডা. এ জেড জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলার মানুষ জেগে উঠেছে। তারা আর কোনো সুযোগ দেবে না এই সরকারকে। এদিকে, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫টি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

মাদারীপুর-ফরিদপুর রুটে বাস বন্ধ মাদারীপুর : সমাবেশকে কেন্দ্র করে মাদারীপুর থেকে সব যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরগামী যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। যদিও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতেই তাদের এ পরিবহন ধর্মঘট।

জালাল মুন্সি নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার এক আত্মীয় অনেক অসুস্থ থাকায় তাকে জরুরিভাবে ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। বাস চলাচল বন্ধ। এখন অন্য উপায়ে যেতে হবে। মাদারীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বলেন, আমাদের নেতা-কর্মী ও জনগণকে কোনোভাবেই ফরিদপুরে যাওয়া আটকানো যাবে না।

আওয়ামী লীগের গণমিছিল : বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকাল গণমিছিল করেছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। আলীপুরস্থ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সামনে থেকে বিশাল একটি মিছিল বের হয়। পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ। বক্তারা বিএনপির সমাবেশের নামে নৈরাজ্য করলে কঠোর হাতে দমনের ঘোষণা দেন।

সর্বশেষ খবর