বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গাইবান্ধার ভোটের তদন্ত প্রতিবেদন

অনিয়ম ১৪৫ কেন্দ্রের ১২১টিতেই

গোলাম রাব্বানী

অনিয়ম ১৪৫ কেন্দ্রের ১২১টিতেই

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে ১৪৫ কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ১২১টিতেই ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এসব ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে অবৈধভাবে অন্য ব্যক্তিকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। একজনের ভোট আরেকজনকেও দিয়ে দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও এজেন্টদের যোগসাজশে এসব অনিয়ম ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ভোটারদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া দুর্বৃত্তরা লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ৭ কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পায়নি তদন্ত কমিটি।

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকেই প্রথম চার ঘণ্টায় সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকায় বসে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখে নির্বাচন কমিশন। পরে অনিয়ম দেখে দুপুরের মধ্যে ৫১ কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়। পরে ইসি পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয়। এসব অনিয়ম তদন্তে ইসির অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। কমিটি প্রথম দফায় ৫১ কেন্দ্রের অনিয়ম তদন্ত করে ২৭ অক্টোবর ইসির কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ইসির নির্দেশে ওই আসনের বাকি ৯৪ কেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে কমিটি। গতকাল কমিটি ইসির কাছে ওই প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১৪৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫১ কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং বাকি ৯৪ কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৭০ কেন্দ্রে একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়ার তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। তবে ৫১ কেন্দ্রের নির্বাচনী অনিয়মে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও বাকি ৭০ কেন্দ্রের অনিয়মে এজেন্টদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। কমিটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এসব চিত্র পেয়েছে। জানা গেছে, ৯৪ কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৭০ কেন্দ্রে ভোটাররা আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরে এজেন্টরা তাদের ভোট দিয়ে দিয়েছে। ভোটাররা এর প্রতিবাদ করায় অনেককেই কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি বেশ কিছু দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। তবে পর্যাপ্ত সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে তদন্ত কমিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করতে পারেনি। এক্ষেত্রে অনেক ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে কমিটি; তাদের অধিকাংশ বহিরাগত। এদিকে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। এক্ষেত্রে শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হবে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন গাইবান্ধা উপনির্বাচনের মতো দেখতে চান না বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার রাশেদা সুলতানা। গতকাল নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। তবে এটা নিয়ে আমরা কোনো আলোচনা করিনি। দু-এক দিনের মধ্যে এটা নিয়ে বসব। শিগগিরই এ বিষয়ে আমরা জানাব। আশা করছি সামনের সপ্তাহে এর বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব। দুটি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ঘটনার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কী ব্যবস্থা হবে কীভাবে নেওয়া হবে এই বিষয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। গাইবান্ধায় যে ঘটনা ঘটেছে সেটাকে বিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, যেটা ঘটে গেছে গেছে। কিন্তু তারপর জেলা পরিষদ, পাবর্তীপুর পৌরসভা ও ফরিদপুর উপনির্বাচন ভালো হয়েছে। কোথাও কোনো নেগেটিভ কথাবার্তা নেই। মাঠ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করবে না- এ ধরনের কোনো বিষয় মনে হচ্ছে না। নির্বাচন ধারাবাহিকভাবে চলছে। মাঠপ্রশাসন ভালোই রেসপন্স করছে। এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা রংপুরে গাইবান্ধার মতো নির্বাচন চাই না। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোটে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খল বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা অসম্ভব।

সর্বশেষ খবর