বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দলীয় কোন্দল বন্ধের নির্দেশ শেখ হাসিনার

রূদ্ধদ্বার বৈঠকে নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন সামনে নির্বাচন

রফিকুল ইসলাম রনি

দলীয় কোন্দল বন্ধের নির্দেশ শেখ হাসিনার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখনই তৃণমূল আওয়ামী লীগের কোন্দল নিরসনের তাগিদ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ১০ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে গণভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। সূত্র জানায়, বেলা ১টায় শুরু হওয়া বৈঠক বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। এতে জেলা নেতারা দলীয় সভানেত্রীর কাছে খোলামেলা কথা বলেন। তারা সংগঠনে কাজ করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হওয়া, জেল-জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সংগঠনে কিছু ব্যক্তির কারণে কোন্দলও তুলে ধরেন। দলীয় সভানেত্রী তৃণমূল নেতাদের কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শোনেন। এরপর দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সবাই একসঙ্গে রাজনীতি করে। একসঙ্গে রাজনীতি করায় নিজেদের মধ্যে একটু বিভেদ তৈরি হয়। মতপার্থক্য তৈরি হয়। সামনে নির্বাচন, এ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের অভ্যন্তরে সব দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখনই কোন্দল নিরসন করতে হবে। নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে যেতে হবে। নিজেদের ঐক্য না থাকলে ক্ষমতায় আসা যাবে না। কাজেই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও সরকার বিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জেলা নেতাদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। তাদের আমলে কত রিজার্ভ ছিল? তারা টাকা পাচার নিয়ে কথা বলে। এদেরকে কড়া জবাব দিতে হবে। কারণ খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। কোকোর পাচার করা টাকা আমরা ফেরতও এনেছি। একই সঙ্গে এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা তো আমরা দেইনি। ১/১১ ওনার প্রিয়ভাজন মইন উ আহমেদ, ফখরুদ্দীন আহমেদরা মামলা দিয়েছিল। সেই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। এগুলো মানুষকে বেশি বেশি করে জানাতে হবে। তারা বিদ্যুতের পরিবর্তে মানুষকে খাম্বা দিয়েছিল। কারণ তারেকের খাম্বার ব্যবসা ছিল। আমরা মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে উন্নয়ন হয় গত ১৩ বছরে সেটা প্রমাণ হয়েছে। অনেক উন্নয়ন করেছি। সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। এদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে সত্যটা তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, সদস্য সংগ্রহ বেশি করলে ভোটের মাঠেও প্রভাব পড়বে। কাজেই ক্লিন ইমেজ সম্পন্ন ব্যক্তি, প্রথমবারের মতো ভোটার যারা, বিশেষ করে নারী ভোটারদের সদস্য করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমকে জানানো না হলেও এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ছিলেন। গতকাল গণভবনে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ বেগম, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তারা সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে। বৈঠক সূত্র জানায়, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নেত্রী গত নির্বাচনে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির কারণে আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। আমি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আমাকে আগামীতে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেবেন। জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আপনাদের মতো মানুষের দলের জন্য ত্যাগ আছে বলেই আওয়ামী লীগ এখনো শক্তিশালী সংগঠন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নেত্রী আমাদের জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্রুত যেন দেওয়া হয়। আমরা কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। এ সময় উপস্থিত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমকে দলীয় সভানেত্রী দ্রুত কমিটি পাস করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, শুধু ফরিদপুরই নয়, যেসব জেলা কেন্দ্রে একক কমিটি জমা দিয়েছে, সেগুলো দ্রুত অনুমোদন দিতে হবে। যেখানে একাধিক কমিটি জমা পড়েছে সেগুলো সমন্বয় করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। টুঙ্গিপাড়া থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হবে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার দাওয়াত দেন স্থানীয় নেতারা। সময় ও সুযোগ হলে এ প্রতিযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর