বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাংক থেকে গ্রাহকের তথ্য প্রকাশে ব্যবসায়ীদের উৎকণ্ঠা

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা । হুমকিতে শিল্পায়ন । তৈরি হবে সংকট

শাহেদ আলী ইরশাদ

ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের আমানতের হিসাবের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন ব্যাংক হচ্ছে আমানত রাখার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। মানুষ বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতে ব্যাংকে আমানত রাখে। এখন ব্যাংকের কাছে যে কেউ তথ্য চাইলে তারা তা দিয়ে দিচ্ছে। এতে একদিকে ব্যাংকগুলো আস্থাহীনতায় পড়বে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। বৃহত্তর স্বার্থে ও দেশের শিল্পায়নের গতি স্বাভাবিক রাখতে এ ধরনের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের একাধিক শীর্ষ ব্যবসায়ী বলেছেন, করোনাকালে দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ব্যবসায়ীদের আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কাছে নিরাপদ বোধ না করলে ব্যবসায়ীরা হুমকিতে পড়বেন। শিল্পায়নের পথ রুদ্ধ হবে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রত্যেকটা ব্যাংকের দায়িত্ব তার গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষা করা। সেটা না পারলে মানুষ ব্যাংককে তো নিরাপদ মনে করবে না। কোনো ব্যাংক যদি তথ্য পাচার করে থাকে, সেই ব্যাংকে টাকা রাখা উচিত না। আদালত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কাউকে তথ্য দেওয়ার অধিকার রাখে না কোনো ব্যাংক।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি আমানতকারীদের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য ব্যাংক থেকে দিয়ে দেওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যাকে-তাকে তথ্য দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকের আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা বলছেন, অর্থ ও সম্পদ সংক্রান্ত বিষয়েও কখনো কখনো স্বামী বিশ্বাস করেন না স্ত্রীকে আবার স্ত্রীও বিশ্বাস করেন না স্বামীকে। তবে ব্যাংকের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সবাই সেখানে টাকা জমা রাখেন। সেই ব্যাংক থেকে যদি আমানতকারীদের তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে যায় তাহলে আর মানুষের আস্থা ও ভরসার জায়গা থাকে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে ওঠার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে গুজবের শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকা হয়। মুদ্রা বাজারে চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে ডলারের। একই সঙ্গে এর উচ্চমূল্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংক চাইলেও আমানতকারীদের তথ্য যে কাউকে দিতে পারে না। যদি সরকার জানতে চায় সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যে কারও তথ্য দিতে বাধ্য। কিন্তু একজন কর্মকর্তা এসব তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করলে মালিক বা কর্তৃপক্ষের চাকরির শর্তের বরখেলাপ হবে। কোনো ধরনের গুজব সৃষ্টি বা ক্ষতি করার কাজে কোনো তথ্য ব্যাংক সরবরাহ করলে সেটা আইনের বরখেলাপ। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা সরকারি কর্তৃপক্ষ দেশের স্বার্থের প্রয়োজনে কোনো গ্রাহকের তথ্য যদি সরকারি কর্তৃপক্ষ চায় সেটা ব্যাংক দিতে পারবে। বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য এক সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়েছিল সরকার কিন্তু তাতে রাজি হয়নি। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হতে হবে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ধরনের কাজ করে থাকলেও ভবিষ্যতে যাতে না করেন সে জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করতে হবে।

সর্বশেষ খবর