শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আর্জেন্টিনা সেমিতে ব্রাজিলের বিদায়

আর্জেন্টিনা সেমিতে ব্রাজিলের বিদায়

উত্তেজনার পারদ তখন সর্বোচ্চ বিন্দুতে। এর চেয়ে বেশি কি আর সম্ভব! আর একটু বাড়লেই হয়তো সহ্যসীমার বাইরে চলে যাবে! ১২০ মিনিটের লড়াই শেষ। এবার টাইব্রেকার। যে টাইব্রেকারের শিকার হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যেও ছিল সেই ভয়। তবে তা দূর করে দিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। পেনাল্টি স্পেশালিস্ট এই গোলরক্ষক নেদারল্যান্ডসের প্রথম দুটি শট আটকে দেন। লিওনেল মেসি আর প্যারেডেসের পর মন্টিয়েলের গোল আর্জেন্টিনাকে সেমির পথ দেখিয়ে দেয়। এনজো ফার্নান্দেস গোল করতে ব্যর্থ হলেও লওটারো মার্টিনেজের শট ঠিকই জালের ঠিকানা খুঁজে পায়। আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ গত বছর কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারেও রুখে দিয়েছিলেন তিনটি শট। আর্জেন্টিনা জিতেছিল সেই ম্যাচে।

গতকাল দুটি নাটকীয় ম্যাচ দেখল দর্শকরা। দিনের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিল ১-১ গোলে ড্রয়ের পর ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরেছে ৪-২ গোলে। নেইমার দারুণ একটা গোল করে পেলের পাশে স্থান নিয়েও ব্রাজিলকে জেতাতে পারলেন না। পরের ম্যাচটাও হলো নাটকীয়। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের তখন ৮৩তম মিনিটের খেলা চলছে। আর্জেন্টাইনরা জয়ের উৎসব করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে পর পর দুটি গোল করেন ডাচ ফুটবলার ওয়েগহর্স্ট। বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। ডাচদের আশার প্রদীপ অবশ্য নিবে যায় টাইব্রেকারে। ২-২ গোলে ড্রয়ের পর ৪-৩ ব্যবধানে টাইব্রেকার জিতে শেষ চার নিশ্চিত করেছেন লিওনেল মেসিরা।

ফুটবল পায়ের কাছে পেলে তিনি খেলেন। মনের আনন্দে। শিশুর সারল্য নিয়ে। বেরসিক শত্রু অনৈতিক আক্রমণ না করলে সে বল নেয় সাধ্য কার! অশুভ শক্তি প্রয়োগ হতে দেখলেই তিনি সরে দাঁড়ান। নিজের প্রিয় খেলনাটাও তখন দিয়ে দেন। কারণ? তিনি জানেন, খেলনাটা আবারও তার কাছে আসবে। তখন তিনি মনের আনন্দে খেলতে থাকবেন। সেই খেলা দেখে মুগ্ধ হবে পৃথিবীর কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। তিনি লিওনেল মেসি। গতকাল কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে খেললেন। মনের আনন্দে। সেই খেলা দেখে বিমুগ্ধ পুরো ফুটবল বিশ্ব।

গতকাল ম্যাচের শুরুতেই ছোট্ট একটা ঝড় তুলেছিল আর্জেন্টিনা। যেন প্রতিপক্ষকে পরখ করে নিল, ঝড় কতটা ভয়ংকর করে তুলতে হবে! আর্জেন্টিনার ছোট্ট ঝড়টা থামার পর ডাচরা খেলল কিছুক্ষণ। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা জেনে নিলেন মেসিরা! ডাচদের পরখ করে নিয়েই সত্যিকারের ঝড়টা তুললেন লিওনেল মেসি। ডাচ ডিফেন্সের ফাঁক গলে লিওনেল মেসি ডি বক্সে বল বাড়িয়ে দেন নাহুয়েল মলিনাকে। ফন ডাইক আর গোলরক্ষক অ্যানড্রিস নোপার্টকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান মলিনা। মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি। মেসির নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে তাকে কুর্ণিশ করেন সমর্থকরা। গোলটা মলিনা করলেও মেসিই যে এর মাস্টারমাইন্ড। লিওনেল মেসি নিজেও দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে তার ধীরগতির শট গোলরক্ষককে কাবু করতে পারেনি। অবশ্য মেসি পেনাল্টি থেকে গোল করে পুষিয়ে দিয়েছেন (৭৩ মিনিটে)। বিশ্বকাপে চার গোল করলেন মেসি। পাশাপাশি দুটি গোলে আছে এসিস্টও। এই তালিকায় মেসির ওপরে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তিনি পাঁচটি গোল করার পাশাপাশি দুটি গোলে এসিস্টও করেছেন।

লিওনেল মেসি গতকাল একটি রেকর্ড স্পর্শ করেছেন। তিনি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার পাশে স্থান নিয়েছেন। দুজনেরই এখন ১০টি করে গোল বিশ্বকাপে।

শেষদিকে ম্যাচটা জমিয়ে দেয় নেদারল্যান্ডস। ৮৩ মিনিটে ওয়েগহর্স্ট গোল করলে আশা জাগে ডাচদের মনে। এরপর বেশ কটি জোরালো আক্রমণ। যোগ করা সময়েরও শেষ মুহূর্তে ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে ডি বক্স থেকে গোল করেন ওয়েগহর্স্ট। ম্যাচটা অতিরিক্ত মিনিটে গড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনাই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন এখনো টিকে আছে আর্জেন্টাইনদের।

ডাচরা বেশ যুদ্ধংদেহী। ফুটবল মাঠটাকেও তারা গোলাবারুদের লড়াইয়ের ময়দান মনে করে! প্রতিপক্ষ যেই থাকুক, তাদের কুপোকাত করতেই হবে। যে কোনো মূল্যে! চাই কী হাতে-পায়ে আঘাত করেই হোক না কেন! গতকাল ফুটবলের লড়াইটা সত্যিকারের লড়াই হওয়ার আগেই কয়েকটি হলুদ কার্ড দেখিয়ে থামিয়ে দিলেন স্প্যানিশ রেফারি অ্যান্টোনিও। এটা করতে গিয়ে বেশ কিছু ভুলও করলেন তিনি! প্রথমার্ধের পর লিওনেল মেসি রেফারির সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। দূর থেকে বোঝার উপায় ছিল না তিনি ঠিক কী বলেছেন। তবে আন্দাজ করা যায়। বেশ কয়েকবারই ফাউলের শিকার হয়েও ফাউল পাননি মেসি। সতীর্থরাও ডাচদের বিপজ্জনক ট্যাকলগুলোর সামনে পড়ে আহত হচ্ছিলেন। রেফারিকে হয়তো খুব নম্র ভাষায় মেসি বলছিলেন, আপনি কিন্তু ঠিক সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। রেফারি মেসির কথা শুনে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাননি। হয়তো ভাবছিলেন, মেসি ঠিকই বলেছেন! কঠিন ম্যাচটা পরিচালনা করতে গিয়ে রেফারি প্রায়ই দিক হারিয়ে ফেলছিলেন! সবমিলিয়ে ম্যাচে তিনি ১৫টি হলুদ কার্ড দেখান। আর্জেন্টিনার আটটি। নেদারল্যান্ডসের সাতটি। এ ছাড়া দুই কোচকেই সতর্ক করেছেন তিনি। শেষদিকে ডাচ কোচ ফন গালকে সরিয়ে দেন ডাগআউট থেকে। লিওনেল মেসিও দেখেছেন হলুদ কার্ড। সেমিফাইনালে দল গড়াই কঠিন হয়ে যাবে লিওনেল স্কালোনির জন্য!

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর