শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - আবদুর রহমান

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যোগ্যকেই বেছে নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা

রফিকুল ইসলাম রনি

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যোগ্যকেই বেছে নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী, দক্ষ, বিচক্ষণ ও সফল রাষ্ট্রনায়ক। অভিজ্ঞ  রাজনীতিবিদ। আসন্ন ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে তিনিই সভানেত্রী নির্বাচিত হবেন, এটা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীর চাওয়া। আর তিনি (শেখ হাসিনা) রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়েই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যোগ্য ও সঠিক ব্যক্তিকেই বেছে নেবেন। আমরা সবাই তা মেনে নেব। সোমবার রাতে পরিবাগে তাঁর নিজ বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, সমসাময়িক রাজনীতি, সংসদ নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের তৎপরতা, বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগসহ নানা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক। আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে কেমন নেতৃত্ব আসবে? এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য বলেন, কাউন্সিল নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা একটাই- বঙ্গবন্ধুকন্যা দলের হাল ধরে আছেন, তিনিই হাল ধরে থাকবেন। কারণ তিনিই একমাত্র আওয়ামী লীগে অপরিহার্য। অন্য কেউই নন। আপনার প্রশ্নের মধ্যে যেটা বুঝি, দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে একটা কৌতূহল আছে সবার মধ্যে। আমার কথা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে দলের সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা যেখানে সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, সেখানে এই দলের সাধারণ সম্পাদক কে হলেন, কে হলেন না তা নিয়ে কারওই আগ্রহ থাকার কথা নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই এ সংগঠনের প্রাণ। তিনিই চাঁদ। তাঁর আলোয় আমরা সবাই আলোকিত। শেখ হাসিনার আলোতেই বাংলাদেশ বিশ্বে আলোকিত হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, জননেত্রী শেখ হাসিনা বিচক্ষণতা দিয়ে যোগ্য এবং সঠিক লোকটিকেই বেছে নেবেন। যে নেতৃত্ব দলকে উজ্জীবিত করতে পারবে, ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারবে। তিনি বলেন, কাউন্সিল মানেই কিছু নতুন মুখ আসবে, পুরনো মুখ বিদায় নেবে। বঙ্গবন্ধুকন্যার টিম নিজেই সাজাবেন। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি যে পথে হাঁটছে, সে পথ সুস্থধারার পথ নয়। তাদের দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমান দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। তারা যদি নির্বাচনে অংশও নেন, যত আসনেই নির্বাচিত হোক, কিন্তু এই দলের নেতৃত্বে খালেদা জিয়া-তারেক রহমান আসতে পারবেন না। সে কারণে তারেক রহমান চাইছেন বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে দিয়ে অস্থিতিশীল, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। যাতে একটি অসাংবিধানিক অপরাজনৈতিক শক্তি আসতে পারে। এতে তারা ভাগবাটোয়ারা করতে পারবেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হবেন। তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন ১০ ডিসেম্বর নিয়ে। সেখানেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সামনে বিএনপির জন্য দুঃখজনক পরিণতি অপেক্ষা করছে। কারণ তাদের দলে দ্বন্দ্ব আছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না। বিএনপির বড় একটি অংশ তারেক রহমানের নেতৃত্ব মানতে চায় না। বর্তমান বিএনপির অধিকাংশ নেতাই বাস্তবতা বুঝতে পারছেন। তারা মনে করেন তারেক যে পথে হাঁটতে বলছেন, তাতে বিপদ ছাড়া কিছু হবে না। বিএনপির ওইসব নেতাও চান দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু থাকুক। আমার ধারণা, বিএনপিতে এমন একটি অবস্থা আসতে পারে, অনেকেই হতাশ হয়ে দলটির রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন। কারণ তারেক রহমানের অযাচিত চাপ, অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনেকে মেনে নিতে চান না। ফলে বিএনপিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ধরনের ভীতি কাজ করছিল বা পরবর্তীতে ক্ষমতায় যাওয়ার যে ভাবনা ছিল, দিন দিন তা ক্ষীণ হয়ে আসছে।

আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল পূর্বঘোষিত। সেদিন বিএনপি কেন গণমিছিলের কর্মসূচি দিল? নিশ্চয়ই এর পেছনে পরিকল্পনা হলো, দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। তারা যেখানে খুশি মিছিল করুক। আমরা বাধা দেব না। তাদের ফাঁদে আওয়ামী লীগ পা দেবে না। আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত কাউন্সিলের দিন কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা মানুষের কাছে যেভাবে প্রকাশ পাচ্ছিল, সেটা আরও বেশি পরিষ্কার হয়ে উঠছে। এতে বিএনপি দল হিসেবে অস্তিত্ব হারাবে।

এক-এগারো থেকে শিক্ষা পাওয়ার পরও কেন বিএনপি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাতে চায়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক প্রকৃতির সঙ্গে সিনিয়র নেতা ও উঠতি নেতাদের মনের দিক থেকে কোনো সমর্থন নেই। কিন্তু যেহেতু তাদের দলের নেতা তারেক রহমান বাইরে থেকে জোরজবরদস্তি করছেন, তারা সে কারণে তার (তারেক) কথা রক্ষার জন্য কর্মসূচি পালন করছেন। তিনি বলেন, হয়তো খুব বেশিদিন নয়, দলটির নেতারা বলবেন, তারেক রহমানের পথ সঠিক নয়। তাকে সঠিক পথে আসতে বলবেন। তারেক রহমান মনে করেন বিএনপি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। প্রয়োজনে ক্ষমতায় আসতে আরও পাঁচ বছর কিংবা ১০ বছর লেগে যাক, তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু দলের নেতৃত্বে থাকতেই হবে। বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে আবদুর রহমান বলেন, তারা যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছে। কিন্তু মূল শক্তি হচ্ছে বিএনপি, সেই শক্তিই তো দুর্বল। তারা ঐক্যবদ্ধ নয়। তাহলে বাকিদের কোথায় নেবে? প্রশ্ন হলো, যারা যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছে, তারা বিএনপিকে নিয়ে আন্দোলন করতে চাইলেও তারেক রহমান আবারও সামনে আসুক তা জামায়াতও চায় না। তাদের এ কর্মসূচি আলোর মুখ দেখবে না বলেই মনে হয়। তাদের কর্মসূচিতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মানুষ যে আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হবে, তা সফল হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি অংশ নেবে না। বড় একটি রাজনৈতিক দল যদি অংশ না নেয় তাহলে কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? জবাবে আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলেও প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। কারণ দেশে একটা শক্তিশালী বিরোধী দল আছে। আমরা মনে করি দেশের ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি বিরোধী দলও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিই থাকুক। স্বাধীনতার পক্ষশক্তির উত্থানের সুযোগ আছে। সবার অংশগ্রহণেই নির্বাচন হবে। কাজেই বিএনপি যদি মনে করে তারা নির্বাচনে না এলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না তাহলে ভুল করবে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা দেখতে চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কোন দল এলো, কোন দল এলো না তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। হঠাৎ কূটনীতিকদের তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশিদের অযাচিত হস্তক্ষেপ অনাকাক্সিক্ষত-অনভিপ্রেত। তাদের পরিধি বাদ দিয়ে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায়, তা মোটেও কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক অধিকার সবারই আছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা মানে বোমা মারা নয়। কথা বলার অধিকার মানে এই নয় যে অন্যের অধিকার হরণ করা। তাদের বলব, এমন হস্তক্ষেপ করবেন না, যা গণতান্ত্রিক পন্থার মধ্যে পড়ে না।

সর্বশেষ খবর