শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চীন ও ভারতে ফের করোনার হানা

প্রতিদিন ডেস্ক

চীন ও ভারতে ফের করোনার হানা

চীন ও ভারতে আবারও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি চীনে কভিডের নতুন ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতেও তা ছড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটি জানিয়েছে, চীনে প্রতিদিন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। যদিও চীন এত মৃত্যুর কথা স্বীকার করেনি। সূত্র : রয়টার্স।

এদিকে গত বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চীনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ডব্লিউএইচও খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনকে সহায়তা করছি। এমনকি আমাদের পক্ষ থেকে চীনা নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসাসেবায় সহায়তার প্রস্তাব অব্যাহত থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশটিতে এর আগে করোনার এত বেশি সংক্রমণ দেখা যায়নি। চীন সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চীনে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে গত মঙ্গল ও বুধবার নতুন করে করোনায় কেউ মারা যায়নি। বুধবার সাংহাই শহরের ডেজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ধারণা, এ মুহূর্তে শহরটির ৫৪ লাখ ৩০ হাজার নাগরিক করোনা পজিটিভ। বছর শেষ হতে এ সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখে উন্নীত হতে পারে। উল্লেখ্য যে, ২০২০ সাল থেকে দেশটিতে ‘জিরো কভিড নীতি’ চালু করা হয়, যা চলতি মাসের শুরুর দিকেও জারি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কঠোর ওই বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ জানাতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার চীনা নাগরিক। বিক্ষোভের মুখে ৭ ডিসেম্বর অধিকাংশ বিধিনিষেধ তুলে নেয় শি জিনপিং প্রশাসন। এরপর থেকেই দেশটিতে করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। চীনের জাতীয় সংক্রামক রোগ কেন্দ্রের পরিচালক ঝাং ওয়েনহং বৃহস্পতিবার সাংহাইয়ের সরকার সমর্থিত অনলাইন সংবাদপত্র ‘দ্য পেপার’কে বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ চূড়ায় উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় গুরুতর রোগীর হারও বাড়বে, এটি নিশ্চিতভাবেই আমাদের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলবে।’ এরপর কভিড সংক্রমণের ঢেউ এক বা দুই মাস স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাংহাইয়ের এক হাসপাতালের করা হিসাব অনুযায়ী, বাণিজ্য নগরীটির আড়াই কোটি বাসিন্দার অর্ধেক আগামী সপ্তাহের শেষ দিকের মধ্যে কভিডে আক্রান্ত হবে। আগামী বছর চীনে কভিডে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন পশ্চিমা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

এ ছাড়া ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ভারতে। এরই মধ্যে ভারতে সেই বিএফ ৭ ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতে মোট চারজন এই নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন গুজরাটের বাসিন্দা এবং দুজন ওড়িশার বাসিন্দা। শুধু তাই নয়, রাজধানী দিল্লিতে বেশ কয়েকজন এই নয়া ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে জানা গেছে। ফলে পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সে জন্য গত বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জরুরি বৈঠক ডাকেন। এ বৈঠক থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং রাজ্যগুলোকেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপসহ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে করোনার ছড়িয়ে পড়া রুখতে ফের টেস্টিং এবং বুস্টার ডোজ দেওয়র উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরেক খবর অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকার দফায় দফায় বৈঠকে বসেছে, তারই মধ্যে গতকাল স্বীকৃতি পেয়েছে ন্যাজাল ভ্যাকসিন। ভারত বায়োটেকের তৈরি এই ভ্যাকসিনকে বুস্টার ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এই টিকা দেওয়া হবে। কোভ্যাকসিন বা কভিশিল্ডের টিকা যারা আগে নিয়েছিলেন, তারাই এই ‘ন্যাজাল ভ্যাকসিন’ নিতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর