বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। দেশে নির্বাচন কমিশন অনেকটাই স্বাধীন। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক এলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্রিটিশ অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ব্রিটিশ এমপিরা বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করেছেন বলে জানান তিনি। এই চার এমপি হলেন- রুশনারা আলী, জনাথন রেনল্ডস, মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং টম হান্ট।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ এমপিদের বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে অতীতে সামরিক শাসকদের কাছ থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে আওয়ামী লীগের। সামরিক শাসকরা বন্দুক ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করত এবং রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজনীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা করত।  রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ভোজ্য তেল আসত। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এই আইটেমগুলোর আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এই জিনিসগুলোর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তাদের সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা সেখানে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাব। ব্রিটিশ এমপিরা বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা এ উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। প্রেস সচিব জানান, ব্রিটিশ এমপিরা বিশেষ করে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেলসহ কানেকটিভিটির উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে এসব অবকাঠামো খুবই সহায়ক হবে বলে মনে করেন তারা। ব্রিটেনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার উল্লেখ করে ব্রিটিশ এমপিরা বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক পরিশ্রমী এবং তারা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। তারা আরও বলেন, যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ব্রিটিশ সহায়তার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আন্তরিক এবং নিজস্ব সম্পদ দিয়ে অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রম শুরু করেছে।

শেখ হাসিনা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, কমনওয়েলথ দেশগুলোর অভিভাবক হিসেবে তিনি সব সময় বাংলাদেশের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ধ্বংসের পথে এগোলে যথাযথ ব্যবস্থা নিন, পুলিশকে প্রধানমন্ত্রী : পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের নামে কেউ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালালে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে। এটুকুই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে। কেউ যেন আর ওই অগ্নিসন্ত্রাস করার সাহস না পায়, মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘিœত করতে না পারে। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আন্দোলন-সংগ্রাম করবে, জনগণকে নিয়ে করবে। কিন্তু সেখানে কেউ যদি কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা সবাইকে নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দল-মত অনেক কিছু থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে কোনো কাজ যেন কেউ ধ্বংস করতে না পারে, কোনো কাজে যেন কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। সেদিকে বিশেষভাবে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

অতীতের অবদানের জন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই, বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় আপনাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। অনেক দুর্যোগ এসেছে, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, সেগুলো আপনারা কঠোর হস্তে দমন করেছেন, জঙ্গিবাদ দমন করেছেন, পাশাপাশি আমাদের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা, এ দায়িত্ব কিন্তু পুলিশ বাহিনীকেই করতে হয়। সার্বিকভাবে আসলে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব বেশি।

আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকার সুফল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশে যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি, এগুলো এমনি এমনি আসেনি। এর জন্য আমাদের শ্রম দিতে হয়েছে, কষ্ট করতে হয়েছে। আজকের বাংলাদেশে আমরা একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। ... আমরা নিজেরাই শুধু মুখে বলি না। আজ সারা বিশ্বে কিন্তু বাংলাদেশ প্রশংসিত।

করোনা মহামারিসহ বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এটা কিন্তু অত্যন্ত দুঃসহ কাজ, এটা আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছি। আর এই করতে পারার পেছনে আপনাদেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে, পুলিশ বাহিনীর অবদান রয়েছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ, বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ। উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সে লক্ষ্য পূরণের জন্য সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই। 

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

সভায় প্রধানমন্ত্রী পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার বক্তব্য শোনেন। র‌্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রবাসীদের হুন্ডিতে টাকা না পাঠানোর আহ্বান : প্রবাসীদের হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা অনুরোধ করব, এখন যারা রেমিট্যান্স পাঠায়, তারা যেন হুন্ডিতে না পাঠিয়ে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠায়, সেই ব্যবস্থাটা করা। প্রবাসীদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তো অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চায়, তারা কিন্তু সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে। সে জন্য পার্টনার খুঁজে নিয়ে এলে আরও ভালো হয়। বিনিয়োগ যত আসবে তত ভালো।   দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগ ভালোই আসছে। বিদেশি বিনিয়োগ, সবার একটা ভালো আকাক্সক্ষা, বাংলাদেশের দিকে সবার দৃষ্টি। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর