বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডলারের কোটা চান ব্যবসায়ীরা

ব্যাংকে সুপারিশ পাঠানোর কথা জানালেন বাণিজ্যমন্ত্রী, এলসি ছাড়াও পণ্য আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডলারের কোটা চান ব্যবসায়ীরা

রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য আমদানিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে ডলারের কোটা রাখে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, যদি কোনো ব্যবসায়ী মনে করেন তারা এলসি খুলতে গিয়ে ডলার পাচ্ছেন না, তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে এলসি খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডলার দিতে বলবে।

গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় ব্যবসায়ীরা ডলার সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে এ অনুরোধ জানান। রমজান মাস সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির এ সভার আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।

সভায় উপস্থিত সূত্র জানান, রমজান মাস সামনে রেখে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, পিঁয়াজ, খেজুর, ছোলা, গম- এ সাত পণ্য আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, এলসি খোলার প্রতিবন্ধকতা দূর হলে রমজানে পণ্য সরবরাহে কোনো সংকট হবে না। একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পণ্যের বিবরণ তুলে ধরে ওই পণ্যগুলো আমদানিতে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না বলে অভিযোগ করে। প্রয়োজনীয় মজুদ থাকলেও কেন সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না, এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতা চান বাণিজ্যমন্ত্রী। ব্যবসায়ীরা জানান, ডলারের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে চিনির দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, এক কেজি চিনিতে ৩২ টাকা আমদানি শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন, চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর বিষয়ে এনবিআরে প্রস্তাব পাঠাবেন তারা। সভায় ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেল, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যে সরকার নির্ধারিত দাম নিয়েও আপত্তি জানান।

ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমদানিনির্ভর পণ্যগুলো আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার সুবিধার্থে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার রাখার জন্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তাব দিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী চিনির ওপর আরোপিত ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। দেশের মানুষের সুবিধার জন্য বিষয়গুলো নিয়ে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

একসঙ্গে বেশি পণ্য না কেনার জন্য ভোক্তাদের অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রমজান শুরুর আগে একসঙ্গে বেশি পরিমাণ পণ্য কেনার কোনো প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাজার অভিযান জোরদার করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান সভায় বলেন, দেশের মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও স্বাভাবিক মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে যাতে ন্যায়সংগত মূল্য নিশ্চিত করা যায়। তিনি বলেন, সরকার সার্বিক বিষয়ে অবগত আছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি খোলাসহ সব ধরনের সহযোগিতা সরকার দেবে। সব ব্যবসায়ীকে সততার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। বাণিজ্য সচিব জানান, সমস্যা হলে এলসি ছাড়াই যাতে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারেন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সভায় ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দফতর ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর