বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
তীব্র শীতে উত্তাপ রাজপথে

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বস্ত্রহানি হবে গণতন্ত্রের : কাদের

আওয়ামী লীগের সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বস্ত্রহানি হবে গণতন্ত্রের : কাদের

রাজধানীসহ সারা দেশে কনকনে শীতেও গতকাল ঢাকার রাজপথে ছিল উত্তাপ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল এবং তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেছে। কুয়াশার সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে সতর্ক পাহারায় ছিলেন। আন্দোলনের নামে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা সহিংসতা করলে তা প্রতিরোধে রাজধানীতে অন্তত পাঁচটি এলাকায় সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। মিরপুরের শাহ আলী মাজার এলাকার পাশে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। উত্তর যুবলীগ সমাবেশ করে ফার্মগেটে। এ সমাবেশগুলো হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ব্যানারে। আর রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়া থানা-ওয়ার্ডে এবং পাড়া-মহল্লায় শোডাউন করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।  

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলার মাটিতে বিএনপিকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যেতে পারে না। তারা রাষ্ট্রকে মেরামত করবে? তারা আবার ক্ষমতা পেলে রাষ্ট্রকে ধ্বংস করবে। এই দেশের গণতন্ত্র বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার আদর্শ বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের বস্ত্রহানি ঘটবে। এই অপশক্তি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক। তিনি আরও বলেন, দেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কী দেখাবেন আপনারা? মুখে মিথ্যাচার আর বিষোদগার।

এখানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, কৃষক লীগ সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ।

ওবায়দুল কাদের বলেন, পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে। ১২ দলীয় জোট দেখলাম বিজয়নগরে সমাবেশ করছে, সব মিলিয়ে ২৪ জন। ৭ দলীয় জোট প্রেস ক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে। মঞ্চে ২০ জন সামনে সাংবাদিকসহ আরও ১৫ জন। বেলা ১টা পর্যন্ত ৩টি দল উপস্থিত ছিল ৪টি দল নেই। ৭ দলীয় ঐক্যজোট তারপর সমমনা ১২ দল বিএনপির সমমনারা দেখলাম। ওই এলাকা (পল্টন) জুড়েই আছে। তারা বসে আছে ফুটপাতের ওপর। মঞ্চও সেখানে স্রোতাও সেখানেই। সবাই ফুটপাত কেন্দ্রিক। তিনি আরও বলেন, তারপর এলডিপি, দেখলাম সেই দৃশ্যপট- হাতেগোনা কয়েকজন বসে আছে। ৫৪ দল আজকে একজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টা ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। ভুয়া, ভুয়া, ভুয়া, এটা গরুর হাট।

বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামাতে হবে : বিকালে মিরপুর শাহ আলী ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আদালত আদেশ দিয়ে মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দিয়েছে। একটা মৃত ইস্যুকে জীবন্ত করবেন এটা অসাংবিধানিক, অস্বাভাবিক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা চাই না, জনগণ চায় না। বিএনপিকে এখন তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামাতে হবে। তত্ত্বাবধায়কের ভূত নামিয়ে ফেলুন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবে হবে। সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ সরকার নির্বাচনে করবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুরে বিএনপির ওপর হামলার দাবি ভুয়া, মির্জা ফখরুল ভুল তথ্য দিয়েছেন। উল্টো বিএনপির কর্মসূচি থেকে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড কমিটি দ্রুত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বজলু ও কচিকে বলব, যে কমিটিগুলো দেওয়া হয়নি দ্রুত দিয়ে দাও। কারণ, ভিতরে ভিতরে হতাশ।

 

সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির উদ্দেশে বলেন, দয়া করে আর ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কোমর ভেঙেছে আবার ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করলে পা ভেঙে যাবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিল্প প্রতিমন্ত্রী আলহাজ কামাল আহমেদ মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আগা খান মিন্টু এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

রাজধানীর দুই স্থানে যুবলীগের সমাবেশ : রাজধানীর ফার্মগেট ও জাতীয় শহীদ মিনারের সামনে পৃথক দুই সমাবেশ করে আওয়ামী যুবলীগ। এদিন সকালে মহানগর উত্তর যুবলীগের উদ্যোগে ফার্মগেটে সমাবেশ করা হয়। উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন, ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, তাজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ নাঈম, রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব কারাগার থেকে বের হয়েছেন। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে বলেছেন সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবেন না। মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে নানক আরও বলেন, আপনি বলুন যদি এই সরকারের পতন না ঘটাতে পারেন তাহলে ওই নয়াপল্টনে কান ধরে ওঠবস করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন। সেই ওয়াদা বাংলার জনগণের কাছে করতে হবে।

বিএনপির গণ অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে ছাত্রলীগের গণ মিছিল : গণ মিছিল শেষে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজের অবস্থান কর্মসূচির ব্যানারে শাহবাগে সতর্ক অবস্থান নেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, মহিলা ইডেন কলেজ, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগ জানায় তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। কেউ যেন কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য এই সতর্ক পাহারা। এখানে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রমুখ।

কৃষক লীগের অবস্থান : সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নেতৃত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর