বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
মতিঝিল

ক্যাশলেস লেনদেনের প্রথম দিন যেমন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনতে রাজধানীর মতিঝিলে শুরু হয়েছে মুঠোফোন ও বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেন। প্রাথমিকভাবে মতিঝিলের ১ হাজার ২০০ মার্চেন্ট নিয়ে এই লেনদেন ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

ক্যাশলেস বাংলাদেশ প্রচারণার অংশ হিসেবে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, অংশগ্রহণকারী ব্যাংক ও পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে কিউআর কোডভিত্তিক পরিশোধ সেবার ব্যবহার বাড়ছে। লেনদেন সহজ ও সাশ্রয়ী হলে এর বহুল ব্যবহার দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে। একটা সময় দেশের সবাইকে বাংলা কিউআর কোড ব্যবহার করতে হবে। এই কিউআর কোডের মাধ্যমে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে লেনদেন করা যাবে। একক ব্যক্তির হিসাবে দৈনিক লেনদেন করা যাবে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। গতকাল থেকে বাংলা কিউআর কোড ও অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেনে যুক্ত হয়েছে ১০টি ব্যাংক, তিনটি এমএফএস ও তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম। অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো হলো- ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক। এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ, এমক্যাশ, রকেট ও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে মাস্টারকার্ড, ভিসা ও আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) যুক্ত হয়েছে। বাংলা কিউআর কোডটি মোবাইল অ্যাপে স্ক্যান করে দ্রুত, সহজ ও সুলভে লেনদেন করা যাবে। পাশাপাশি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার পরে এবং পেমেন্টের কনফার্মেশন ও ই-রিসিট পাবেন গ্রাহক। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা এমএফএস ওয়ালেটধারীরা অ্যাপের মাধ্যমে এই সুবিধা নিতে পারবেন। এতে নগদ অর্থ বহনের ঝামেলা এড়ানোর পাশাপাশি ছেঁড়া-ফাটা বা জাল নোটের আশঙ্কা থাকবে না। গতকাল এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল মতিঝিলে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর চায়ের দোকানে বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করেন।  গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পণ্য বা সেবা মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে নগদ অর্থ, কার্ড বা চেক ব্যবহার হয়ে থাকে। নগদ অর্থে পরিশোধ ঝুঁকিপূর্ণ, চেক পরিশোধ সময়সাপেক্ষ, জটিল। অন্যদিকে কার্ড ব্যবহারের জন্য ব্যাংক, এমএফএসগুলোকে ডিজিটাল পেমেন্ট অবকাঠামো বিনির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়। ফলে কার্ডে মূল্য পরিশোধ ব্যবস্থা মার্চেন্টদের জন্য ব্যয়বহুল। ছোট মার্চেন্টের (যেমন- ডাব, ঝালমুড়ি বিক্রেতা) পক্ষে এ ব্যয় বহন করা সম্ভব নয় বিধায় প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার কাক্সিক্ষত মাত্রায় অর্জিত হয়নি। ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসারে পৃথিবীব্যাপী লো কস্ট সলিউশন প্রচলনের তাগিদ রয়েছে। কুইক রেসপন্স (কিউআর) ডিজিটাল পেমেন্ট এমনি একটি লো কস্ট সলিউশন। বাংলাদেশে কিছু ব্যাংক ও এমএফএসের নিজস্ব কিউআর থাকলেও সর্বজনীন কিউআর নেই। ফলে শুধু ওই ব্যাংক/এমএফএস গ্রাহকরা পারস্পরিক লেনদেনেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বজনীন বাংলা কিউআর প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়। বাংলা কিউআরে অংশগ্রহণকারী যে কোনো ব্যাংক/এমএফএস অ্যাকাউন্টধারী মার্চেন্টকে পণ্য বা সেবা মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। কিউআর কোড কেবল একটি প্রিন্টেড ছবি হওয়ায় এই পরিশোধ ব্যবস্থায় মার্চেন্টের অংশগ্রহণের খরচ নগণ্য বিধায় কিউআরভিত্তিক পরিশোধ ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। বাংলা কিউআর পরিশোধ ব্যবস্থায় ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ গঠন ‘স্মার্ট  বাংলাদেশের’ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

সর্বশেষ খবর