শিরোনাম
বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বড় পরিবর্তন আসছে না আসনের সীমানায়

♦ আগের সীমানাই বহাল রাখতে চায় ইসি ♦ বিদ্যমান সীমানা বহাল রেখে খসড়া প্রকাশ করলে ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন হবে না : বদিউল

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে একাদশ সংসদের সীমানা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে, সংসদীয় আসনের সীমানায় খুব বড় পরিবর্তন আসছে না। বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের ইসির সিদ্ধান্তের কথা জানান। এদিকে বিদ্যমান সীমানা বহাল রেখে খসড়া প্রকাশ করলে ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন হবে না বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা   বলছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা সংকটের নিরসন দীর্ঘদিনেও হয়নি। বিগত কমিশনও সীমানা জটিলতা জিয়ে রেখে বিদায় নিয়েছে। সীমানা জটিলতা নিয়ে অনেক মামলা-অভিযোগ জমা পড়ে ছিল। কিন্তু কিছুই আমলে নেয়নি তারা। অনেক এলাকার আসন পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের। এখনো অনেক আসনের সীমানা ৯০ কিলোমিটার রয়েছে। তিন-চারটি উপজেলা নিয়েও রয়েছে একটি আসন। আবার একটি উপজেলা ও স্বল্পসংখ্যক ভোটার নিয়ে রয়েছে অনেক আসন। তারা বলছেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যদি সীমানা জটিলতা নিরসন না করা হয় তবে নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আর সীমানা জটিলতা নিরসন না করলে আসনভিত্তিক জনসংখ্যায় বেশি তারতম্য থাকলে সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে জনগণ বঞ্চিত হবে। বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সীমানা যে ছিল তা নিয়ে খসড়া প্রকাশ করা হবে এবং বিজ্ঞপ্তিতে দাবি আপত্তির জন্য একটা সময় নির্ধারণ করা হবে। তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে সব দাবি আপত্তি উত্থাপিত হবে। ইতোমধ্যে অনেকেই নিজ উদ্যোগে যে সব আবেদন দিয়েছেন সে সব আবেদন প্রায় ২০ থেকে ২৫টি; এ আবেদন এবং ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে সব আবেদন পড়বে সেগুলো নিয়ে শুনানিআন্তে বিধিবিধানের আলোকে আমাদের চূড়ান্ত বিভক্তি এলাকা ঘোষণা করা হবে। সংসদীয় আসনে পরিবর্তন হবে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়টি হবে মূলত প্রাপ্ত আবেদনের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। কারণ আমরা আগে খসড়া প্রকাশ করব। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে আবেদনগুলো আসবে সেই আপত্তি এবং ইতোমধ্যে নিজ থেকে যে আবেদনগুলো পড়েছে সেগুলো শুনানিআন্তে আমরা বলতে পারব আসলে কয়টায় কী হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে যেভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে অর্থাৎ এখন যেটা আছে সেটা দিয়েই আমরা খসড়া প্রকাশ করব। এরপর কারও যদি কোনো আপত্তি থাকে সেই আপত্তি দাখিল করবে। সব আবেদনের শুনানি হবে। এরপর চূড়ান্ত হবে কয়টা আসনের সীমানা পরিবর্তন হচ্ছে। খসড়া কবে নাগাদ প্রকাশ করা হবে এই প্রশ্নে তিনি বলেন, খসড়া দ্রুতই প্রকাশ করা হবে। এটা আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই করে দেব। বাস্তবতা এবং আইনের বিষয়টাও তাই। আগে তো মানুষকে জানাতে হবে। তারপর তাদের কোনো আপত্তি থাকলে তার ওপর শুনানি হবে।

তিনি জানান, যে আইন আছে প্রথম হচ্ছে ভৌগোলিক অখণ্ডতা, তারপর আঞ্চলিক অবিভাজ্যতা, তারপর প্রশাসনিক এলাকা, চতুর্থত জনসংখ্যার ঘনত্ব। এসব বিবেচনায় নিয়ে যদি প্রয়োজন হয় সংশোধন হবে। না হলে হবে না। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে এটি বর্তমান কমিশনের প্রথম কমিশন বৈঠক। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কিছু মানদণ্ড রয়েছে। যেমন, ভোটার সংখ্যার সমতা। এসব মানদণ্ড আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় যথাসম্ভব সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। গত জাতীয় সংসদ (একাদশ সংসদ) নির্বাচনের সময় সীমানা যেটা ছিল তা নিয়ে খসড়া প্রকাশ করা হলে ইসি সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ তাদের প্রদত্ত নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে না বলে আমি মনে করি।’ এক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমানা বহাল রেখে খসড়া প্রকাশ করলে ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন হবে না বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর