বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার বাংলাদেশি ছাত্র

যাচ্ছে উদ্ধারকারী দল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

৩৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার বাংলাদেশি ছাত্র

তুরস্কের কাহরামানমারাস সুতচু ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গোলাম সাঈদ রিংকুকে ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩৭ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রাতে তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রফিকুল ইসলাম তাকে উদ্ধারের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘রিংকুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ এদিকে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হাফিজ মুহাম্মদ একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, উদ্ধারকারীদের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জাকারিয়া তুরস্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে আমাদের জানিয়েছেন রিংকুকে ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। হাফিজ মুহাম্মদ বলেন, উদ্ধারকারীরা রিংকুকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, রিংকু যে ভবনটিতে বাস করতেন, সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছেই ছিল ভবনটি। এর আগে, গতকাল ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে আরেক বাংলাদেশি নূরে আলম বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতরাতে এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, তুরস্কে গোলাম সাঈদ রিংকুকে ভবনের নিচে চাপা পড়া অবস্থা থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তিনি শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল। অন্যদিকে তুরস্কে পিএইচডি গবেষণারত নাজমুস সাকিব ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার অবস্থান রাজধানী আঙ্কারায়। এখানে আমিসহ অবস্থানরত বাংলাদেশি ভাইবোনেরা নিরাপদে আছেন। আলহামদুলিল্লাহ। ডর্মেটরিতে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে এত এত ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে যে, মানসিকভাবে সুস্থ থাকা দায়।’ আঙ্কারায় বসবাসরত নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই উদ্বেগে রয়েছেন। কারণ ভূমিকম্পের পর আফটারশক হচ্ছে। আবার বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় কি না, সেই আতঙ্কে রয়েছেন সবাই। বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যরাও আতঙ্কে আছেন। সব মিলিয়ে ভয়াবহ মানসিক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।’

সোমবার তুরস্কের স্থানীয় সময় ভোর রাত ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পটি যখন আঘাত হানে, তখন বেশির ভাগ মানুষ ঘুমাচ্ছিলেন। এরপর দুপুরে ৭.৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এখন পর্যন্ত এই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজারের বেশি। গোটা বিশ্ব যখন যুদ্ধ, শরণার্থী সংকট ও গভীর অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত তখন আরও একটি মানবিক বিপর্যয় দেখছে।

আঙ্কারা ইস্তাম্বুলে হটলাইন চালু : ভূমিকম্পের আঘাত হানার পর তুরস্কের বাংলাদেশের আঙ্কারা দূতাবাস ও ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ে হটলাইন চালু করা হয়েছে। এ হটলাইনে জরুরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তুরস্কে বাংলাদেশের আঙ্কারা দূতাবাস ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রবাসীদের এ দুটি হটলাইনে যোগাযোগ করতে বলেছে- +৯০ ৫৪৬ ৯৯৫ ০৬৪৭ ও +৯০ ৫৩৮ ৯১০ ৯৬৩৫। এ ছাড়া ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ দূতাবাস এক বার্তায় তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। তুরস্কে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে কনস্যুলেটের হটলাইন নম্বরে (+৯০৮০০২৬১০০২৬) যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

যাচ্ছে বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল : তুরস্কে ভূমিকম্পের ঘটনায় উদ্ধারকাজে যাচ্ছে বাংলাদেশের ১০ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন করে সদস্য থাকবেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমানে (সি-১৩০) দলটি আজ (বুধবার) তুরস্ক যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর