রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শোকে স্তব্ধ তুরস্ক-সিরিয়া

ভূমিকম্পে লাশ উদ্ধার ছাড়িয়েছে ২৫ হাজার

প্রতিদিন ডেস্ক

শোকে স্তব্ধ তুরস্ক-সিরিয়া

তুরস্কে কবরের পাশে স্বজনের আর্তনাদ -এএফপি

শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। দুমড়ে-মুচড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা তুরস্ক ও সিরিয়ার ভবনগুলো এখন নিস্তব্ধ গণকবর। হাজার হাজার ধ্বংসস্তূপ এক-একটি মৃত্যুকূপ হয়ে আছে। এ মৃত্যুপুরী থেকে কোনো সাড়াশব্দ মিলছে না। তার পরও স্তূপের ভিতর কেউ বেঁচে আছেন কি না- তা জানতে উদ্ধারকারী এবং বাইরে থাকা স্বজনরা বারবার পরখ করার চেষ্টা করছেন। তারা দেওয়ালে কিংবা ধ্বংসস্তূপে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছেন চাপা ধ্বনি বা সাড়াশব্দ। এদিকে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়ে ২৫ হাজারে পৌঁছে গেছে। সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি, এএফপি

সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় ২৫ হাজারে। এর পরও ইট-কংক্রিটের স্তূপের মধ্যে জীবিত অথবা লাশের সন্ধানে চলছে উদ্ধারকাজ। অভিযানে যোগ দিয়েছে বহু দেশের হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী। আছে স্বেচ্ছাসেবকরাও। কেবল তুরস্কেই উদ্ধার হয়েছে ২১ হাজারের বেশি লাশ। আহত ৮০ হাজারের বেশি। আর সিরিয়ায় প্রাণহানি নিশ্চিত হয়েছে সাড়ে ৩ হাজারের ওপরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, তুরস্কের গাজিয়ানতেপ থেকে শুরু করে সিরিয়ার আলেপ্পো- গোটা জনপদই এখন ধ্বংসস্তূপের বিরানভূমি। দানবীয় ভূমিকম্পের পর নগর বা নাগরিক জৌলুস হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে সভ্য লোকালয়। প্রলয় দাপটে ধসে যাওয়া এ ভূখন্ডের নতুন পরিচয় এখন মৃত্যুপুরী।

উদ্ধারকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে বিরামহীনভাবে চলছে উদ্ধার অভিযান। মূলত আটকা পড়াদের জীবিত উদ্ধারে তৎপড়তা জোরালো করা হয়েছে। তবে ঘটনার পর এরই মধ্যে পাঁচ দিন পার হয়েছে। এখন যদি কাউকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, তা হবে ‘অলৌকিক’ ঘটনা। এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, চারদিক থেকে আমরা লাশের গন্ধ অনুভব করতে পারছি। আমরা এখান থেকে অনেকের লাশ বের করে নিয়ে আসতে দেখছি। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ। কাউকে জীবিত পাওয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

আরেক খবরে বলা হয়, ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পর গতকাল তুরস্কের ধ্বসংস্তূপ থেকে দুই নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ধসে পড়া ভবন থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ওই দুই নারী ১২২ ঘণ্টা আটকা ছিল। ঘটনাটি তুরস্কের কাহরামানমারা প্রদেশের। ৭০ বছর বয়সী ওই নারীর নাম মেনেকসে তাবাক বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ১২৮ ঘণ্টা পর ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক কিশোরকেও জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্কে হাতায় প্রদেশে ১৩ বছর বয়সী এই কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে গাজিয়ানতেপ প্রদেশের নারদাগে তুরস্কের উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের পাঁচ দিনেরও বেশি সময় পর একই পরিবারের পাঁচজনকে উদ্ধার করেছে। ধসে পড়া বাড়ির ভিতরে তারা ১২৯ ঘণ্টা আটকা ছিলেন। উদ্ধারকারীরা প্রথমে এক মা ও তার কন্যাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে নিয়ে আসে। এ নিয়ে আশা ফুরিয়ে গেলেও গতকাল অন্তত নয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। যদিও তীব্র শীতের মধ্যে উদ্ধার কাজে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশি দলও উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্যের এই উদ্ধারকারী দল সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করে এবং ৯ তারিখ রাত পৌনে ১০টার দিকে তুরস্কের আদানা মিলিটারি এয়ার বেইসে পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা আদিয়ামান শহরে পৌঁছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার তারা এক কিশোরীকে জীবিত এবং তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে। জীবিত ওই কিশোরীর বয়স ১৭ বছর বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর