মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝুলে আছে আরপিও সংশোধন

গেজেটের পরেও ভোট বাতিলের ক্ষমতা চায় ইসি

গোলাম রাব্বানী

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব সাত মাস ধরে ঝুলে আছে আইন মন্ত্রণালয়ে। দীর্ঘদিন সংশোধনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে কোনো সাড়া না পাওয়ায় ইসি কয়েক দফা তাগাদা দিয়েছে। পরে নভেম্বরে আনুষ্ঠানিক সাড়া মিললেও এখনো তেমন অগ্রগতি নেই। যদিও সম্প্রতি আরপিও নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে ইসির দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে কয়েকটি বিষয় নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১০ মাস বাকি থাকলেও কবে নাগাদ আরপিও সংশোধন হবে সেই বিষয়ে এখন নির্বাচন কমিশন অন্ধকারে রয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে গত বছরের ৮ আগস্টে আরপিও সংশোধনে একগুচ্ছ প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর সরকারের কোনো সাড়া না পেয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর, ১০ অক্টোবর ও সবশেষ ২৭ নভেম্বর অগ্রগতি জানতে চেয়ে তিন দফা চিঠি দেয়।

সাড়া না পেয়ে সিইসি হাবিবুল আউয়াল গত বছরের ২৭ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরাও তো অনন্ত কাল ধরে একটা ম্যাটার পার্সু করতে পারি না। বিষয়টা আমরা শেষ করে দিতে চাই। রেসপন্স না পেলে আমরা অন্য কাজে রেসপন্স করব।’ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জবাব না পেলে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা, স্বাধীনতা এবং সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে ‘জনমনে সংশয় তৈরি হতে পারে’ বলে সতর্ক করে ইসি।

পরে ২৯ নভেম্বর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব দিয়েই যাচাই করা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। তবে সাড়ে তিন মাসে কোনো ধরনের সাড়া না পাওয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘বিশেষ অনুরোধের’ পরে মন্ত্রণালয় ত্বরিত প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু আবারও সেই প্রক্রিয়া ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারা।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিওতে একগুচ্ছ সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে ইসি। ভোটে অনিয়ম রোধে ও প্রার্থিতায় কিছু বিধান, রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাবসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব করে ইসি। তারা জানান, আরপিওর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশকিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ভোটের সময় কোনো অভিযোগ পেলে কমিশন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পারে বিদ্যমান আইনে। এখন ভোটের সময়ের পরে থেকে ফল প্রকাশের পর, এমনকি গেজেট প্রকাশের পরে নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ের অভিযোগের ক্ষেত্রে কমিশন যেন তদন্ত করতে পারে এবং অনিয়মের প্রমাণ পেলে ভোট বাতিল করতে পারে, এজন্য ৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশন এই প্রস্তাবনার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছে। আরপিও সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, আরপিও সংশোধনীর বিষয় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বেশ কয়েক মাস হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরপিওর দু-একটি বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তারা বলেছে এই বিষয়গুলো চিন্তা করে দেখতে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে- আমরা যেটা চাচ্ছিলাম ইভিএমে আঙুলের ছাপ যে মেলে না, এতে ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারিত করে দিতে। এটা আইনে চলে আসুক যে এক শতাংশের বেশি অ্যালাউ করব না। উনারা (আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা) জানালেন যে, এটা বিধিমালা দিয়ে কাভার করা সম্ভব। এ একটা পয়েন্টে উনারা আপত্তি করেছিলেন। তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পরে অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। বন্ধ করা বা সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম। এটা ফল ঘোষণার পরেও যেন ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকে। কিন্তু উনারা বললেন যে, ৯১ ধারা দিয়েই কাভার হচ্ছে। ৯১ দিয়ে এলে কাভার হয় না, আমরা যতটুকু জানি। উনাদের যুক্তিটা তুলে ধরলাম। এই কমিশনার বলেন, ‘আমি জয়েন করার কিছুদিন পরে একটা ফাইল এলো। এতে দেখলাম যে ময়মনসিংহের দুর্গাপুরে একটা নির্বাচনে বোধহয় ব্যালট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। তখন কমিশন গেজেট হওয়ার পর ভোট বাতিল করেছিল। কিন্তু হাই কোর্ট বলে দিলেন, যে গেজেট হওয়ার পর কমিশনের করার কিছু থাকে না। আমরা এজন্য কমিশনের হাতে ক্ষমতা যেন থাকে এই প্রস্তাব করেছিলাম। উনারা জানতে চাইলে আমরা এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম।’

রাশেদা সুলতানা বলেন, গেজেট হওয়ার পরে তো ট্রাইব্যুনাল। গেজেট হওয়ার আগে তো কেউ ট্রাইব্যুনারে যেতে পারবেন না। যখন একজন হারবে, তিনি আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন, উনার রাইট। তখন কোর্ট কমিশনের কাছে ব্যালট চাইল, এটি তো উদ্ধার হয়নি। কখন কার কাছে চলে গেছে। তো যেটা উদ্ধার হয়নি, সেটা কীভাবে কোর্টকে দেবে। এক্ষেত্রে তো কমিশনের কিছু করার থাকবে না। এ রকম পরিস্থিতি যদি সামনে আসে কমিশনের হাতে অবশ্যই একটা ক্ষমতা থাকা উচিত, যে ওই নির্বাচনটা বন্ধ করে দেওয়া যায়। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যারা বৈঠকে ছিলেন তারা আমাদের জাস্টিফিকেশনে খুশি। তারা বলছেন আর কোনো অসুবিধা নেই। এখন কেবিনেটে যাবে। পাস হবে সংসদে। এটাই উনারা পাঠাবেন। ভেটিংয়ে আর বাদ যাচ্ছে না। কেবিনেট থেকে সংসদে যাবে। উনারা যদি মনে করেন কোনটা রাখব, কোনটা রাখব না, এতে তো কারোরই কিছু বলার নেই। এটা আইন মন্ত্রণালয়েরও প্র্যাকটিক্যালি কিছু করার থাকবে না। এ কমিশনার বলেন, প্রত্যেকটা নির্বাচনে আমরা বলে দেব কত শতাংশ ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ওপেন করতে পারবেন। কেননা, যার আঙুল নেই তাকে তো ভোট দেওয়ার সুযোগটা দিতে হবে। তবে আমরা এমন কিছু দেব না, ১ শতাংশ একটি জাস্টিফাইড সংখ্যা। প্রতি নির্বাচনের আগে বিধি দ্বারা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অতীতে নাকি ৫ শতাংশও দেওয়া হয়েছিল এমন অভিযোগ অনেকে করেন। কাজেই জাস্টিফাইড একটা সংখ্যা দিলে কেউ আর বলতে পারবে না, তাই আমরা ১ শতাংশ দিতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। প্রত্যেক ভোটের আগে আমরা সার্কুলার দিয়ে দিতে পারব। কমিশন যখন সার্কুলার দেয় সেটাও কিন্তু আইন। আমরা আরপিওতে পাচ্ছি না, তবে বিধি দিয়ে করতে পারব।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর