সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
সীতাকুন্ডে বিস্ফোরণ

সংকটাপন্ন দুজন তিনজনের চোখ নষ্ট

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ১৫ নম্বর শয্যায় শুয়ে আছেন প্রভাষ রায়। মাথায় তার গুরুতর আঘাত। ওঠানামা করছে অক্সিজেন। ভালো করে পাওয়া যাচ্ছে না প্রেশার। তাই তার চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরা। অন্যদিকে আইসিইউ বিভাগের ১৪ নম্বর শয্যায় শুয়ে আছেন মাকসুদুল আলম। তার ডান পা ও হাঁটুর নিচ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেছে। আর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আহতদের স্বজনরা বলছেন, ‘দুজনের জীবনই আমরা স্রষ্টার ওপর ছেড়ে দিয়েছি। সবার কাছে দোয়া চাই।’ চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রভাষ রায় মাথায় মারাত্মক আঘাত পান। তার অক্সিজেন ওঠানামা করছে এবং প্রেশারও ভালো করে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমরা তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এ ছাড়া মাকসুদুলের ডান পা ও হাঁটুর নিচ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেছে। তবে তাকে নিয়ে আমরা আশাবাদী। আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ জানা যায়, সীতাকুন্ডের সোনাইছড়িতে সীমা অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ইতোমধ্যে মারা গেছেন ছয়জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৮ জন। আর চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন দুজন। ময়নাতদন্ত ও প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিহত ছয়জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। তাদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির জেলা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকাল ৪টার মধ্যে পরিবারের কাছে ছয়জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন অনেকে : সীতাকুন্ডের বিস্ফোরণের ঘটনায় শ্রবণশক্তি হারাতে হবে অনেককেই। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনে কেউ হতবিহ্বল, কেউ আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি করেন। কারও চোখের সামনে দিয়ে উড়ে যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কান। অনেকের শ্রবণে দেখা দিয়েছে সমস্যা। চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠানটিতে ফিলিংম্যান হিসেবে কাজ করি। মাথায় সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হলেও কানে কম শুনছি।’

এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রিপন মারাক বলেন, ‘আমি সীমা অক্সিজেন প্লান্টের অপারেটর। বিস্ফোরণের উচ্চ আওয়াজে আমার ডান কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কান দিয়ে এখন কিছু শুনতে পাচ্ছি না। বাঁ কানেও কম শুনছি।’

এ ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. মো. ফিরোজ বলেন, সীতাকুন্ডের ঘটনায় কানে সমস্যা নিয়ে অনেকে এখানে আসেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

দৃষ্টি হারাতে পারেন তিনজন : সীতাকুন্ডের ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কা আছে তিনজনের। এরই মধ্যে চমেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে তিনজনকে। তিনজনের অবস্থাই খারাপ। কারও চোখে ঢুকেছে কাচ। কাচ ঢুকে কেটে গেছে চোখের নার্ভে। অস্ত্রোপচার করে বের করা হচ্ছে কাচ। কারও মুখ থেঁতলে গেছে। আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে চোখে। মুখ ও চোখে ঢুকেছে লোহার পাত ও কাচ। চমেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তনুজা তানজিন বলেন, চক্ষু বিভাগে তিনজনকে ভর্তি করা হয়। তিনজনেরই অবস্থা খারাপ। তিনজনেরই একটি করে চোখ বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সবার চোখে কাচের টুকরো ও লোহার পাত ঢুকেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চোখ। তাই তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনজনেরই অস্ত্রোপচার হয়েছে।

চিকিৎসাধীন ১৮ জন : সীতাকুন্ডের ঘটনায় বর্তমানে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৮ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে আইসিইউ বিভাগে দুজন, ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে সাতজন, অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে দুজন, নিউরো সার্জারি বিভাগে চারজন ও চক্ষু বিভাগে তিনজন।

সর্বশেষ খবর