বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আর্তনাদে ভারী রাতের হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের একটি বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পর একে একে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনা হয় হতাহতদের। এ সময় নিহত ব্যক্তিদের স্বজন এবং আহত ব্যক্তিদের আর্তনাদে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মঙ্গলবার রাতের পরিবেশ। এদিকে ঘটনার পর থেকেই স্বজনের খোঁজে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ালেই শত শত মানুষ তাদের স্বজনদের খোঁজে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। স্বজনরা শনাক্ত হলেই শুরু হয় তাদের আহাজারি। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বাঁশির আওয়াজে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়িতে করে নিয়ে আসা হতাহতদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে আসা মাত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের শুরু হয় ছোটোছুটি। গুরুতর আহতদের দ্রুত চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছে দিতে কেউ ছুটে আসেন স্ট্রেচার নিয়ে কেউবা বাঁশি বাজিয়ে মানুষের জটলা কমানোর চেষ্টা করেন। পাশের দাঁড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা হাত মাইকে আহ্বান জানান যারা রক্ত দিয়ে সহায়তা করতে চান তাদের নাম ও টেলিফোন নম্বর লিপিবদ্ধ করার জন্য। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে সিদ্দিকবাজার এলাকায় নর্থ-সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাত তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে আহত হয়েছেন শতাধিক। সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকজনের লাশ শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে। মর্গের ভিতরে লাশ থাকায় স্বজনরা তা শনাক্তের চেষ্টা করছেন। কারও লাশ শনাক্ত হলেই শুরু হয় স্বজনদের গগণবিদারী আহাজারি। মর্গে উঁকি দিতেই দেখা যায় লাশগুলো মেঝেতে এলোমেলো অবস্থায় রাখা হয়েছে। সেখানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। এ সময় এক নারীকে বলতে শোনা যায়, ওরে বাবা, আমি তোকে পেলাম, কিন্তু লাশ। পরে ওই নারী বেহুঁশ হয়ে পড়েন। ওই লাশ ঘরের দায়িত্বরত একজন জানান, অনেকেই আসছেন লাশ শনাক্তের চেষ্টা করছেন, আবার অনেকেই লাশ শনাক্ত করছেন। তবে যারাই স্বজনের সন্ধানে লাশ ঘরে ঢুকছেন সবাই আহাজারি করছেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু সময় পরপরই হাসপাতালে আনা হচ্ছে একের পর এক লাশ। আনা হচ্ছে গুরুতর আহতদের। প্রিয় স্বজনদের খোঁজে হাসপাতালে ভিড় করছেন স্বজনরা। সেখানে এসে খোঁজ না পেয়ে স্বজন বেঁচে আছেন কি না এমন শঙ্কায় ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে অনেকে ছুটছেন ঘটনাস্থলের দিকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ফল ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম জানান, তার সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা। আমিনুলের দোকান ছিল সিদ্দিকবাজারের সামনে। মঙ্গলবারের আকস্মিক বিস্ফোরণে পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তার। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। সেখানেই থাকেন স্ত্রী ও সন্তানরা। কিন্তু সেই তথ্য তিনি জানাননি স্ত্রী ও সন্তানদের। আমিনুলের মতো একই অবস্থা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন আরও অনেকেই। জীবন থমকে দেওয়া সেই স্মৃতি নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন সানি ও শহীদুল। স্বজনরা বলছেন, মাথা ও মুখে বেশি আঘাত পাওয়ায় কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন তা জানা নেই। পরিবারগুলো এখন কীভাবে চলবে তা নিয়েই শঙ্কায় তারা।

সর্বশেষ খবর