শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

সমাধিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মোনাজাত করেন -পিআইডি

গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় গতকাল সারা দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি সরকারিভাবে পালনের পাশাপাশি দলীয়ভাবে পালন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটে নিহত হয়ে তিনি শায়িত আছেন টুঙ্গিপাড়ায়। ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিনটি গতকাল শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হয়। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করে।

দিবসটি উপলক্ষে গতকাল ভোর সাড়ে ৬টায় সারা দেশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল- জাতির পিতার সমাধি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, মিলাদ মাহফিল, দোয়া, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, বিনামূল্যে রক্তদান, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, বিনামূল্যে চিকিৎসা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ইত্যাদি।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন : সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সেখানে নীরবতা পালনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। বিউগলে তখন করুণ সুর বাজানো হয়। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার দেয়। এরপর দলের পক্ষ থেকেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। এরপর জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটনসহ সংসদের হুইপরা। শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জনতার ঢল নামে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও তার আশপাশের এলাকা।

টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিতে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে রাষ্ট্রপতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তাঁরা জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকশ দল গার্ড অব অনার দেয়। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

নানা প্রতিষ্ঠান সংগঠনের আয়োজন : দিবসটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদযাপন করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল- বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কেক কাটা ইত্যাদি। সকালে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ক্যাম্পাসে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিদেশি নাগরিকদের সম্মান প্রদর্শন নিয়ে বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বহির্বিভাগে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা, ফ্রি সার্জারি ও ফ্রি রুটিন ইনভেস্টিগেশন, ‘শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শিশুর পুষ্টিবিষয়ক ক্যাম্প’ উদ্বোধন, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, ল্যাবরেটরি সার্ভিস সেন্টারের উদ্যোগে কেক কাটা, পরিচালক হাসপাতাল অফিসের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ ও বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে দোয়া মাহফিল ইত্যাদি। উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের বহির্বিভাগে নিজেও রোগী দেখেন। দিবসটি উপলক্ষে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির উদ্যোগে রাজধানীর তিনটি স্থানে এতিম শিশুদের মাঝে সুষম খাদ্য বিতরণ, আলোচনা সভা, কেক কাটা হয়। রাজধানীর সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অনাথলয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। উপকমিটির সদস্য আখলাকুর রহমান মাইনুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি প্রকৌশলী বিদ্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সাধারণ সম্পাদক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পানিসম্পদ সম্পাদক রাহুলা বড়ুয়া প্রমুখ। এরপর আজিমপুর এতিমখানায় সুষম খাদ্য বিতরণ ও কেক কাটা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, কোরআনখানি, বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নসের গভর্নর হাফেজ মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন। মোনাজাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মহা. বশিরুল আলম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মো. মনিরুজ্জামান, পরিচালকবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারন মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। রাজধানীর মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনা সভা করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সভায় বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত কবি রফিক আজাদের ‘এই সিঁড়ি’ কবিতার আবৃত্তি পরিবেশিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এতিম ও পথশিশুদের নিয়ে মেট্রোরেলে ও ছাদখোলা বাসে আনন্দভ্রমণের আয়োজন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এদিন একঝাঁক এতিম-পথশিশু মেট্রোরেলে আগারগাঁও-উত্তরা, উত্তরা-আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করে। এর মধ্যে উত্তরা উত্তর স্টেশনে একটি কেকও কাটা হয়। পরে তারা ছাদখোলা বাসে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখে। তেজগাঁও ও মিরপুরের দুটি এতিমখানা থেকে ৭০ জন শিশু এই আনন্দভ্রমণে অংশগ্রহণ করে।

সর্বশেষ খবর