রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকা কর্মপরিকল্পনা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা

শাহেদ আলী ইরশাদ

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঢাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে বিশদ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরিকল্পনায় স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণকে মসৃণ ও টেকসই করার জন্য ২০২৯ সালের পরও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) অব্যাহত রাখাসহ অন্যান্য বাণিজ্যের পথ খোঁজা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল আজ ঢাকা ত্যাগ করবে। ২ এপ্রিল পর্যন্ত তারা বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ সফর করবেন। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের সভাপতি নিহাদ কবির ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ। সূত্র জানান, সফরকালে প্রতিনিধি দল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতর ও বিভিন্ন সদস্যদেশের নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরবে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাজারসুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ সফর বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণে অবদান রাখবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) সুবিধার আওতায় ২০০১ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ওই সব দেশ থেকে। চলমান অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য সুবিধার (জিএসপি) মেয়াদ শেষে হবে চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বর। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন ১০ বছর মেয়াদি (২০২৪-২০৩৪) জিএসপি সুবিধা কার্যকর হবে। নতুন জিএসপি রেগুলেশন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পর্যালোচনাধীন আছে। নতুন জিএসপিতে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্তি কঠিন শর্তের অধীনে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর রুলস অব অরিজিনের শর্ত কঠিন করাসহ প্রডাক্ট গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণকে টেকসই করতে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ২০২৯ সালের পরও জিএসপির অধীনে চলমান বাণিজ্য সুবিধাগুলো চাইব। সুবিধা ধরে রাখার এখনই উপযুক্ত সময়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট এখন নতুন জিএসপি রেগুলেশন পর্যালোচনা করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির বছরে এ সফর দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যসহ অন্যান্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে ৩৮টি দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে ২৮টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র। বাংলাদেশসহ ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া সমস্ত পণ্য রপ্তানির জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীদের কর্মসংস্থান বেড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে। তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতি করছে। আমরা রিসাইক্লিং করছি। পরিবেশ নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সুবিধাটা অব্যাহত রাখলে এগুলো নিয়ে আমরা আরও বেশি কাজ করতে পারব। তিনি বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও বাণিজ্য সুবিধা আরও ছয় বছর অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে আমরা যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর