দুই প্রতিবেশী দেশের যুদ্ধাবস্থায় বাংলাদেশের এখন সর্বোচ্চ সতর্কতার সময়। তবে এ সতর্কতা সামরিক নয়, সতর্ক হতে হবে কূটনৈতিক অবস্থানগত। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে নিতে হবে নিরপেক্ষ অবস্থান, ঝুঁকে পড়া যাবে না কোনো পক্ষে। সেই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যে কোনো পর্যায় থেকেই যেন উসকানি না আসে সে বিষয়ে থাকতে হবে সর্বোচ্চ সতর্ক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আমেনা মহসীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েক দিনের উত্তেজনার পর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। তবে এরই মধ্যে দুই দেশের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কথা বলেছেন। এটা পরিস্থিতি উত্তরণে আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয়। অবশ্য তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা জানা নেই। তবে যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও যে তারা কথা বলেছেন- এ উদ্যোগ ইতিবাচক। তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার এ সময় বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাইব, যেন এ অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করে। সে অনুযায়ীই কথা বলতে হবে। উসকানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি জনগণ, গণমাধ্যম, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল সবাইকে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি রাখতে হবে, যেন এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি না করে। কেউ যেন অন্য কোনো অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা না করে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের চলমান যুদ্ধাবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা তাদের এ যুদ্ধাবস্থা থেকে শান্তির পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাই। চীন, আমেরিকা, রাশিয়া, জাপানসহ আঞ্চলিক বন্ধুদের বলব, এ যুদ্ধাবস্থা থেকে ভারত-পাকিস্তানকে ফেরাতে আপনারা উদ্যোগ গ্রহণ করুন। যুদ্ধ কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। এ অঞ্চলে যুদ্ধ বাঁধলে তা সবার জন্যই খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিকভাবে একটা খারাপ সময় পার করছে। তার ওপর এ যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সরাসরি কোনো দেশের পক্ষ নেওয়া উচিত হবে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত কিংবা পাকিস্তানকে যুদ্ধের উসকানি দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে, যুদ্ধ বন্ধে আঞ্চলিক সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করা। সাবেক এ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, যুদ্ধের কারণে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে নজর দেওয়ার যে সুযোগ পাওয়া গেছে তা সরকারের গ্রহণ করা উচিত। সারা বিশ্বের নজর এখন ভারত-পাকিস্তানের দিকে। এটাই আমাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়ার উপযুক্ত সময়। ৫ আগস্টের পর আমরা এখনো দেশটাকে গোছাতে পারিনি। মূল্যস্ফীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে স্থবিরতা কাটানোর দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। অভ্যুত্থানের মূল দাবি অনুযায়ী- মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সেটা গণভোট বা নির্বাচন যেভাবেই হোক ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।